ক্ষমা করে ক্ষমা চেয়ে নিন ”বুলবুল”আপার কাছে

মাহবুবা সামসুদ বুলবুল দুই বাংলার জনপ্রিয় ও নন্দিত কবি। আন্তর্জাতিক সাহিত্য সংগঠন "নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র তাঁরই হাত ধরে সিলেটে আলোর মুখ দেখে। "সিলেট লেখিকা সংঘ"ও তাই। আমরা এক ঝাঁক তরুণ শুধুমাত্র নন্দিনীমাতা সুলতানা রাজিয়া ও মাহবুবা সামসুদ বুলবুল আপার কারণে অদ্যাবধি সক্রিয় আছি। বুলবুল আপার সাথে আমার ঘনিষ্ঠতার নানা শিকড় ছিলো। গতকাল নন্দিনীর একনিষ্ঠ কর্মীি এম আলী হোসেন আপার অসুস্থতা নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়। পড়ে শরীরটা শীতল হয়ে যায়। আমার চিরকালীন বন্ধু ও সহপাঠী কবি রাতে কল করলে কবি মাসুদা সিদ্দিকা রহী, ইশরাক জাহান জেলি ছেলেসহ কবি আনোয়ার হোসেন মিছবাহ এর ডাকে আপাকে দেখতে যাই। গত ১৮ অক্টোবর আপার শেষ জন্মদিন আমরা পালন করেছিলাম উনার ড্রইংরুমে। সবাই খুব হই হল্লা করেছিলাম, ছবি উঠেছিলাম। গতকাল রাতে এ কাকে দেখলাম? এক ক্ষীণকার রূপ রসহীন ছোট্ট মানুষ মুখ লুকিয়ে শুয়ে আছেন। যে মানুষ বারান্দায় কন্ঠ শুনে রান্না ঘর থেকে ছুটে আসতেন, সে মানুষের কানের কাছে নিজের নাম বলে কতবার ডাকলাম একবারও সাড়া দিলেন না। রেডিও বা অন্য কোথাও দূর থেকে দেখলেই গল্প জমিয়ে দিতেন সে মানুষের চোখের সামনে বসেও চোখের পাতা খুললেন না। যিনি হাতে ধরে কাছে বসাতেন উল্টো তাঁরই হাত ধরে কোন সাড়া পাইনি। সারা জীবনে এমন কোন দিন নেই যে বুলবুল আপার ঘরে গিয়ে গলা ডুবে খেয়ে আসিনি, গতকালই হলো ব্যতিক্রম। বুলবুল আপাকে দেখা শোনা করছেন তাঁর প্রবাস ফেরৎ স্বামী সামসুদ আহমেদ। একজন শক্ত সামর্থ্য মানুষ প্রাণপ্রিয় স্ত্রী অসুস্থ হয়ে জ্ঞানশূণ্য হওয়ায় নিজেও হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। বুলবুল আপার স্বামী অশ্রুসিক্ত হয়ে আপার প্রতি কারো মনে রাগ ক্ষোভ বিদ্বেষ পুষিয়ে না রেখে আপাকে ক্ষমা করে দিতে অনুরোধ করেছেন। আমরাও আপার জ্ঞান বা হুশ না থাকায় উনার হাত ধরে আপার কাছে আমাদের কোন অপরাধ থাকলে আপার হয়ে ক্ষমা করে দিতে অনুরোধ করি। মাহবুবা সামসুদ বুলবুল সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজার খালপাড় নিবাসী আহবাব চৌধুরী ও জোহরা চৌধুরী দম্পতির সুযোগ্য কন্যা। তিনি ১৯৫৭ সালের ১৮ অক্টোবর জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৭৭ সালের "বেগম" পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় তাঁর প্রথম লেখা ছাপা হয়। ১৯৮০ সালের ২ মার্চ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন। তিনি সাজেদ আহমেদ তাশহুদ (বাপ্পী) ও নাসিফ আহমেদ (রাফি) নামে দুটি সন্তানের জননী। ২০০১ সালে "বরাক উপত্যকায় আমরা ক'জন" শিরোনামে ভ্রমণকাহিনী গ্রন্থ ও ২০০৭ সালে "বিরহ অবেলায়" নামে কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। কবি মাহবুবা সামসুদ বুলবুল বাংলাদেশ বেতার সিলেট কেন্দ্রের নিয়মিত কথক ও কবিতা পাঠক ছিলেন এবং কিশলয়, সুখের নীড়, মা ও শিশু অনুষ্ঠানের নিয়মিত কথক ছিলেন সেই সাথে "ঘরোয়া" নিয়মিত উপস্থাপনা করতেন। তিনি কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ সিলেট, কবিতা পরিষদ পাবনা, বাংলাদোশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি সিলেট ইউনিটের আজীবন সদস্য। তিনি মিলনউদ্দিন লস্কর ও তুষারকান্তি নাথের যৌথ সম্পাদনায় ২০০৪ সালের জুন মাসে ভাষা-সংস্কৃতি আকাদেমি, অসম হাফলং প্রযোজিত "বরাক-সুরমা" শিরেনামে যৌথ কবিতার ক্যাসেট প্রকাশ করেন। দীর্ঘ জীবনের সাংগঠনিক কর্মদক্ষতার মূল্যায়ন স্বরূপ ২০০২ সালে নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র সিলেট জেলার উদ্যোগে "শ্রেষ্ঠ নন্দিনী পদক", ২০০২ সালে নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র খুলনা জেলার উদ্যোগে "খান সাহেব সুলতান আহমেদ পদক", ১৪১০ বাংলা সনে বাংলাদেশ কবিতা সংসদ পাবনা জেলার উদ্যোগে "বাংলা সাহিত্য পদক- ১৪১০", ২০০৩ সালে নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র কলকাতা'র উদ্যোগে "শ্রেষ্ঠ নন্দিনী পদক", ও গঙ্গা-বুড়িগঙ্গা সম্মেলন পদক-২০০৩, ২০০৪ সালে নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র ঢাকা জেলার উদ্যোগে "শ্রেষ্ঠ নন্দিনী পদক", ভাষা ও সংস্কৃতি আকাদেমি, হাফলং অসম,এর উদ্যোগে তৃতীয় মহা সম্মেলন পদক-২০০৬ লাভ করেন। তিনি সাহিত্য চর্চায় বিশেষ অবদানের জন্য রাগীব রাবেয়া পদকও লাভ করেন। মাহবুবা সামসুদ বুলবুল আপার ছোট বোন কবি রওশন জাহান চৌধুরী জেসমিন, ছোট ভাই এম সি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি আসাদুজ্জামান চৌধুরী পাপ্পু, বড় ভাসুর সাংসদ উপাধ্যক্ষ আব্দুল শহিদ,