৬২৪ বছরে প্রথম বন্ধ থাকছে মাহেশের রথযাত্রা

ওড়িশার পুরীতে নিয়ন্ত্রিতভাবে রথযাত্রা হবার কথা জানানো হলেও ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম রথযাত্রা বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার শ্রীরামপুরের মাহেশের রথযাত্রাটি পুরীর রথযাত্রার পরই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। রথ উপলক্ষ্যে মাহেশে যে রথযাত্রা হয় তাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ অংশ নেন। বিতরণ করা হয় জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরামের প্রসাদ। কিন্তু এবছর করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতিতে কিছুই হবে না বলে জানিয়েছে জগন্নাথ জিউ ট্রাস্টি বোর্ড। তবে আচার-অনুষ্ঠান যথারীতি পালন করা হবে। সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ না থাকলেও জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরামের দারু মূর্তিকে মন্দিরের একটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। আর মাসির বাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে একটি নারায়ণ শীলাকে। পুরীর মতো মাহেশে অবশ্য মূর্তিগুলিকে প্রতি ১২ বছর অন্তর পরিবর্তন করা হয় না। মাহেশের মন্দিরে থাকা মূর্তিগুলি প্রথম থেকে একই রয়েছে। মাহেশে রথযাত্রার সূচনা হয়েছিল ১৩৯৬ সালে এক ভক্তের মন্দির ও জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার দারু মূর্তি তৈরির পর থেকে। জানা যায়, শ্রীচৈতন্যদেব সন্যাস গ্রহণের পর পুরী যাওয়ার পথে মাহেশের মন্দিরে থেমেছিলেন। সেখানেই তিনি সমাধিস্থ হয়েছিলেন। সেই সময়ই তিনি মাহেশকে নব নীলাচল বলে চিহ্নিত করেছিলেন। ১৭৯৭ সালে রামকৃষ্ণদেবের ভক্ত বলরাম বসুর প্রপিতামহ কৃষ্ণ রাম বসু মাহেশের মন্দিরে একটি কাঠের রথ দিয়েছিলেন রথযাত্রার জন্য। কয়েক বছরের মধ্যে সেটি আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। আরও দু’বারও কাঠের রথের একই পরিণতি হয়েছিল। এরপরে ১৮৮৫ সালে লোহা দিয়ে বর্তমানের এই চারতলা নবরতœ রথটি তৈরি করেছিল মার্টিন বার্ণ কোম্পানি। এটির উচ্চতা ৫০ ফুট। আর ওজন প্রায় ১২৫ টন। এই রথে নয়টি শিখর রয়েছে। রয়েছে বারোটি লোহার চাকা। এদিকে, ওড়িশা সরকারের অনুমতিক্রমে পুরীর বিখ্যাত রথযাত্রা প্রতি বছরের মতো এ বছরও হবে। তবে সেই রথযাত্রায় কোনও ভক্ত বা সাধারণ মানুষ অংশ নিতে পারবেন না। সীমিত সংখ্যক সেবায়েত রথে করে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে মাসীর বাড়ি নিয়ে যাবেন এবং অষ্টম দিনে ফিরিয়ে আনবেন। রথযাত্রা উপলক্ষে সব বিধি এবং আচার অনুষ্ঠান যথারীতি পালন করা হবে বলে পুরীর গজপতি দিব্য সিংহ দেব জানিয়েছেন। পুরীর এই বার্ষিক রথযাত্রায় অংশ নিতে দেশ বিদেশ থেকে এই সময় মানুষ আসেন পুরীতে। তবে এবার পুরীর রথযাত্রা হবে জনশূন্য পরিবেশে।