করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তারা সর্বোচ্চ ৫০ লাখ ও সর্বনিম্ন ১০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। এই খাতে নতুন তহবিল থেকে ঋণ দেওয়া হবে। তবে ঋণের অর্থ দিয়ে গ্রাহক তার আগের নেওয়া কোনো ঋণ সমন্বয় বা পরিশোধ করতে পারবেন না। এসব বিধান রেখে ‘নভেল করোনাভাইরাস প্রভাব মোকাবিলায় কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্রশিল্প উদ্যোক্তাদের দ্রুত ঋণ প্রদান’ সহায়ক নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনের পর খুব শিগগিরই এটি কার্যকর হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। সূত্র আরও জানায়, সিএমএসএমই (কটেজ, মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ) খাতকে ঋণ দেওয়ার জন্য একটি তহবিল থাকবে। তহবিলের অর্থ দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক বা অর্থ মন্ত্রণালয়। সে তহবিলের অর্থ প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংক দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আবার আড়াই শতাংশ সুদে সেটি বিতরণ করবে ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা (এমএফআই) ও অন্যান্য ঋণ সংস্থার কাছে। এসব সংস্থা ওই তহিবলের অর্থ গ্রাহককে দেবে ১৪ শতাংশ সুদে। তবে এর মধ্যে গ্রাহক পরিশোধ করবে ৯ শতাংশ। এই তহবিলের মেয়াদ হবে ৫ বছর। জানতে চাইলে বিআইডিএস-এর সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এমকে মুজেরী বলেন, স্বাভাবিক সময়ে সিএমএসএমই খাতে ঋণ পেতে বড় সমস্যা হয়। করোনা পরিস্থিতিতে এটি আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। কাজেই তাদের সহায়তা দরকার। কিন্তু নতুন প্যাকেজে তাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে। এর আগে বড় শিল্পসহ অন্যান্য খাতে যে প্যাকেজ ঋণ ঘোষণা দিয়েছে সেখানে সুদের হার কম। কিন্তু সিএমএসএমই খাতে সুদের হার বেশি। এটা ন্যায়নীতির পরিপন্থি হবে। ছোট খাতগুলোকে আরও বেশি সুযোগ দেওয়া দরকার। কারণ সিএমএসএমই খাত কর্মসংস্থান ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এটি সরকার আরও ভেবে দেখতে পারে। জানা গেছে, করোনার প্রভাব মোকাবিলায় ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা হচ্ছে এসএমই খাতের জন্য। তবে ডিসেম্বর পর্যন্ত এসএমই খাতে ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়। এসব প্যাকেজ বাস্তবায়নে কী ধরনের সমস্যা সেটি শনাক্ত করতে দেশের অর্থনীতিবিদ, শিল্প উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী নিয়ে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় একটি সিরিজ বৈঠক আয়োজন করেছে। সেখানে সুপারিশ উঠে আসে এসএমই খাতকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়ার জন্য। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এসএমই খাতের প্রণোদনা প্যাকেজ গতিশীল করতে সিএমএসএমই খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করে একটি নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে। নীতিমালার খসড়ায় উল্লেখ করা হয়, এই নীতিমালার আওতায় কোভিড-১৯ এ ক্ষতিগ্রস্ত কুটি, মাইক্রো ও ক্ষুদ্রশিল্প উদ্যোক্তাদের কার্যক্রম অব্যাহতি রাখার লক্ষ্যে চলতি মূলধন ঋণ আকারে দেওয়া হবে। এই ঋণ পাওয়ার অগ্রাধিকার তালিকায় আছে যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ অধিদপ্তর, বিসিকসহ সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, বিদেশ বা শহরে ফেরত আসা উদ্যোক্তারা। ঋণ তহবিল থেকে অর্থায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক, মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ), সরকারের বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং মাইক্রো ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউট (এমএফআই)। তহবিল থেকে গ্রাহক পর্যায়ে যে ঋণ দেওয়া হবে, এর মধ্যে ৪০ শতাংশ অর্থায়ন করতে হবে ট্রেডিং খাতে এবং ৬০ শতাংশ করতে হবে উৎপাদন ও সেবামুখী প্রতিষ্ঠানের কাছে। খসড়া নীতিমালায় আরও বলা হয়, গ্রাহক একক বা গ্রুপ পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা, কটেজ উদ্যোক্তা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা এবং মাইক্রো উদ্যোক্তা সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা এবং স্মল উদ্যোক্তা ঋণ সহায়তা পাবেন ৫০ লাখ টাকা। ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচিত গ্রাহক গ্যারান্টি হিসেবে ঋণের আবেদনপত্রের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্মনিবন্ধন সনদ অথবা পাসপোর্টের কপি অথবা ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি দিতে হবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার কাউন্সিলর অথবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের প্রত্যয়নপত্র এবং অন্য দুজনের গ্যারান্টি দিতে হবে। খসড়া নীতিমালা প্রণয়নের যৌক্তিকতায় বলা হয়, প্রান্তিক পর্যায়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রণোদনা প্যাকেজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য দ্রুত নিরসনে সিএমএসএমই খাত মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এ খাতে সবচেয়ে বেশি অর্থায়ন করে ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা (এমএফআই) এবং বিশেষায়িত ব্যাংক।
মন্তব্য