ছেলের সর্বোচ্চ শাস্তি চান মা

ছেলে অপরাধী প্রমাণিত হলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি চান রাজধানীর কলাবাগানে শিক্ষার্থী ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ফারদিন ইফতেখার দিহানের মা সানজিদা সরকার। কলাবাগানের ডলফিন গলির বাসায় ঘটনার বিষয়ে তার সঙ্গে কথা হয় । আনুশকার মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি ঘটনার সঠিক তদন্ত এবং সুষ্ঠু বিচারও দাবি করেন। তিনি বলেন, আমার মনের অবস্থা খুব খারাপ। কথা বলার মতো অবস্থায় নেই আমি। ফারদিনের বাবা আব্দুর রউফ সরকার এই ঘটনার পরে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে তিনি কলাবাগানের বাসায় আছেন। আমি যদি এখন ফারদিন সম্পর্কে ভালো কথা বলি তাহলে একটি প্রশ্ন তো থেকেই যায়। সবাই বলবে, ফারদিন ভালোই যদি হবে তাহলে কেন এই দুর্ঘটনাটি ঘটালো। ফারদিনের সঙ্গে যদি আনুশকার একটি সম্পর্ক থেকে থাকে সেটাতো অন্যায় হিসেবে দেখছি না। তিনি বলেন, ঘটনার দিন আমার বাবা অসুস্থ ছিলেন। তাকে দেখতে সিরাজগঞ্জে যাই। ফারদিন-আনুশকার সম্পর্কের বিষয়টি আমি আগে থেকে জানতাম না। তাছাড়া আমার ছেলে ফারদিন ওভাবে বাসা থেকে কোথাও বের হতো না। আমি থাকা অবস্থায় এ রকম কখনো কোনো কিছু করতে দেখিনি। এই ঘটনার পরে আমি কল্পনাও করতে পারিনি যে আমার ছেলে এটা করতে পারে। সে ইতিমধ্যে তার দোষ স্বীকার করেছে এবং যদি সে অন্যায় করে থাকে তাহলে তাকে আদালত যে শাস্তি দিবেন আমি মাথা পেতে নিবো। ফারদিনের মা বলেন, এমন কিছু হবে আমি যদি ঘুর্ণাক্ষরেও জানতাম তাহলে ফারদিনকে কখনোই একা বাসায় রেখে যেতাম না। প্রথমে একজন নারী এবং পরে মা হিসেবে এ ঘটনা মেনে নেয়া খুবই কষ্টকর। পুরো ঘটনাটিকে বোঝার চেষ্টা করেছি। ফারদিনের বন্ধুদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করেছি ফারদিনের ধর্ষণ ও হত্যার উদ্দেশ্য ছিল কি না? একজন নারী হিসেবে কোনো মেয়ে বা কিশোরীর ধর্ষণ এবং হত্যা করার বিষয়টি কখনোই প্রত্যাশা করি না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফারদিনের পরিবার ও তার বড় ভাই সুপ্ত সরকারের বিরুদ্ধেও স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীর মুখে জোর করে বিষ ঢেলে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছিল সুপ্ত’র বিরুদ্ধে। টাকার বিনিময়ে মামলাটি আপস করেছেন সুপ্ত’র বাবা এমন অভিযোগ রয়েছে। ফারদিনরা তিন ভাই। তাদের বাবা আবদুর রউফ সরকার রাজশাহী জেলার অবসরপ্রাপ্ত সাব রেজিস্ট্রার। রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার রাতুগ্রামে তাদের বাড়ি। এ ছাড়াও জেলার বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরে তাদের আরো একটি বাড়ি রয়েছে। রাজশাহী শহরেও আছে দু’টি বাড়ি। এর একটি সাগরপাড়া এলাকায়। আরেকটি বাড়ি মহানগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকায়। ঢাকার কলাবাগানে রয়েছে নিজস্ব ফ্ল্যাট। বড় ছেলে সুপ্তকে নিয়ে তার বাবা গ্রামে থাকেন। আর মা সানজিদা সরকারের সঙ্গে ঢাকার বাসায় ফারদিন ও তার মেজো ভাই নিলয় থাকেন। নিলয় একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। ২০০৯ সালে সুপ্ত’র স্ত্রী রুনা খানকে হত্যার অভিযোগ উঠেছিল সুপ্ত ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে নিহত রুনার মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছিলেন। তখন আসামিদের শাস্তির দাবিতে মরদেহ নিয়ে রাজশাহী শহরে মিছিল হয়েছিল। কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) ঠাকুর দাস মালো বলেন, ধর্ষণ এবং হত্যার আগে চেতনানাশক কোনো কিছু খাওয়ানো হয়েছিল কিনা সেজন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এবং বয়স নির্ধারণের জন্যও তার নমুনা নেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সুনিশ্চিত হওয়া যাবে।