দাদার শুভ জন্মদিনে তাঁর লেখনি,

আমার বুকব্যথা চিনচিনে। অরিন্দম দত্ত চন্দন একজন আপাদস্তক শিল্পী। নাটকে অভিনয় করেন, নাটক রচনা করেন, নাটকের নির্দেশনা দেন, সে বিস্তর সকলেরই জানা। দৈহিক গঠন, দরাজ কন্ঠের উচ্চারণ, পাত্রভেদে আলাপন, স্বভাবসিদ্ধ আচরণ তাঁর মর্যাদাকে উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করেছে সুদীর্ঘ কাল ধরেই। দাদা একজন পেশাজীবি ছিলেন। ছিলেন বলব এ কারণেই, গতকাল তাঁর ফেসবুকের টাইম লাইনে পেশাগত জীবনের বন্ধন মুক্তির শেষক্ষণে মর্মস্পর্শী একটি লেখা উপহার দেন। সেই লেখাটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরলাম। "১৯৮০ সালের ৩০ শে নভেম্বর , মদন মোহন কলেজে মুদ্রাক্ষরিক -কাম অফিস সহকারী পদে কর্মজীবনের শুরু। বেসরকারি কলেজের চাকুরী বিধি অনুসারে আজ ২৯ শে জানুয়ারি শেষ কর্মদিবসের কয়েক মূহুর্ত বাকি। শিক্ষাবান্ধব সরকারের মহতি উদ্দ্যোগ ছিল উপজেলা পর্যায়ে অন্তত একটি করে কলেজকে সরকারি কলেজে রুপান্তরিত করা। ঘটনা টা ২০১৬ সালের। কলেজের হীরক জয়ন্তী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতথি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এবং তাঁর ঘোষনায় সিলেট সদর উপজেলায় মদন মোহন কলেজটিও সরকারী করনের অন্তর্ভুক্ত হয়।দুইটি ইন্সপেকশন সহ কলেজের যাবতীয় তথ্যাদি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা হওয়ার পর ও শিক্ষক কর্মচারীদের আত্তীকরণ প্রক্রিয়া এখনো চলমান, এদিকে আমাদের কয়েকজনের বয়স ৬০ বছর অতিক্রান্ত হলো। না পেলাম কলেজ থেকে কোন আর্থিক সুবিধা না পেলাম সরকারি কোন ঘোষনা। ভবিষ্যৎ পড়ে থাকলো অনিশ্চিত এর ওপর। আমার মতো এ হেন শিক্ষক কর্মচারীদের ভাগ্যে যা কিছু সিদ্ধান্ত আসুক বা না আসুক, প্রতিষ্ঠান গুলো যেন এবং যারা কর্মরত থাকবেন তাদের জন্য মংগল বয়ে আনুক শিক্ষাবান্ধব সরকারের কাছে এই করুনাই প্রার্থনা করি।" অরিন্দম দত্ত চন্দন দাদা সিলেটের বহু রাজনৈতিক আন্দোলনের সূতিকাগার, জাতীয় বহু রাজনীতিবিদ সৃষ্টিকারী বিদ্যাপীঠ মদন মোহন কলেজে কর্মরত ছিলেন। তিনি কর্তব্যে কর্মরত থেকে অনেকের উপকার করেছেন উদার মানসিকতায়। অনেকে এই কলেজের শিক্ষকদের আত্মীয় স্বজন হয়েও শিক্ষকদের কাছে না গিয়ে চন্দনদার দারস্থ হয়ে উপকৃত হয়েছেন। অনেকের কলেজে ভর্তির সম্পূর্ণ টাকা নেই, ফরম ফিল আপের টাকা নেই, ফি মওকুফ করতে, বেতন মওকুফ করতে চন্দনদা। দশজনের প্রয়োজনে মওকুফ করে দিতে দিতে নিজের জীবনের প্রয়োজন, সুখ স্বাচ্ছন্দও মওকুফ করে দিয়েছেন। এইতো সেদিন কলেজ সরকারীকরণে গুরুত্বপূর্ন প্রয়োজনে কাগজপত্র প্রস্তুতের জন্য লাগাতার ক'দিন আমাদের অফিসে আমাদের কাছে, এ অফিস ও অফিস ছুটোছুটি করে তা যোগার করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। আজ যারা কলেজ সরকারী হওয়ায় আনন্দ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন তারা কি জানেন চন্দনদার এ দায়িত্ব সুচারুরূপে পালিত না হলে কলেজ সরকারীকরণের কাজ আজও সম্ভব হত না। গত মাসখানেক আগে শ্রদ্ধেয় আলী মোস্তফা চৌধুরী সাহেব স্ব সস্ত্রীক কলেজ অধ্যক্ষার সাথে দেখা করতে গেলে আমি সেখানে উপস্থিত হই। অধ্যক্ষা মহোদয়া কথা প্রসঙ্গে আমার পারিবারিক পরিচয় পেয়ে বললেন, আপনার দাদু এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা না করলে আমার চাকুরী করে এতোটুকু পথ অতিক্রম করে অধ্যক্ষ হওয়া সম্ভব হতো না। প্রত্যুত্তরে আমিও জানিয়েছি চন্দনদা কাগজপত্র তড়িৎ প্রস্তুত না করলে হয়তো সরকারীকরণ এতোদ্রুত সম্ভবপর হত না। অধ্যক্ষা কথা প্রসঙ্গে এক পর্যায়ে জানান তিনি কারো না কারোদের অন্যায় দাবী বা চাপ না মানলে তাঁকে জামায়াত বিএনপির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বদনাম দেয়া হয়। উনার কথা শুনে আনার বেতারের কথা মনে পড়ে গেলো। দেখলাম, সব জায়গায়ই দুশ্চরিত্রতা জাগয়া অবৈধ দখল করপ আছে। ভাবলাম তাঁর মত সবার মেরুদন্ডটা শক্ত থাকতো তবে অন্যদের অহেতুক দূর্ভোগ পোহাতে হতো না। চন্দনদার সম্পূর্ণ লেখাসহ যে অংশ আমাকে ব্যথিত করেছে তা হলো "আমাদের কয়েকজনের বয়স ৬০ বছর অতিক্রান্ত হলো। না পেলাম কলেজ থেকে কোন আর্থিক সুবিধা না পেলাম সরকারি কোন ঘোষনা। ভবিষ্যৎ পড়ে থাকলো অনিশ্চিত।" চন্দনদার সম পদমর্যাদায় আমিও জেলা প্রশাসনে চাকুরী করি। বদলীজনিত ভীতি, অবহেলা আর উদাসীনতার কারণে পদন্নোতি গ্রহণ করিনি। অথচ আমাদের অনেক পরে চাকুরীতে যুক্ত হওয়া ছোটরাও আজ "প্রশাসনিক কর্মকর্তা" । যোগ্যতা থাকা সত্বেও সুযোগ আর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার একটা যন্ত্রণা আছে, সে যন্ত্রণার বোবা কান্না আছে। যারা ভূক্তভোগী তারাই শুধু জানেন। চন্দনদাদের সব বড় বোন সর্বমঙ্গলা দত্ত দিদি আমার সহকর্মী ছিলেন, অবসরের আসন্নকালে পদন্নোতি পেয়ে অবসরে গেছেন। আমরাও চাকুরীর শেষ বছরগুলোয় এসে পদন্নোতি, উচ্চগ্রেডসহ নৈতিক নানা সুযোগ সুবিধা লাভের আন্দোলন করছি। জানি না এর ফল ভোগ করা হবে কি না। চন্দনা কারো ভাই, কার স্বামী, কারো বাবা। অনেকের অভিভাবক। জন্মের শুভদিনে অবসর গ্রহণে সকল ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত হলে এ বিদায় সুখময় হতো। সমাপনান্তে এটুকু শুভ কামনা দাদার অবসর জীবন সুস্থ, সুন্দর ও সুখময় হোক। এ শুভ কামনা। শুভেচ্ছান্তে