সিলেট নগরীর বাগবাড়ীস্থ শামীমাবাদে অবস্থিত মইনুদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজের প্রভাষকের বিরুদ্ধে শিক্ষিকাকে উত্ত্যক্তকরণ, ছাত্রীদের সাথে অশিক্ষকসূলভ আচরণ, কলেজের স্বার্থ বিরোধি কার্যকলাপসহ নানা অভিযোগ করেছেন কলেজটির সাবেক অধ্যক্ষ। সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে মইনউদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন- আমি এ কলেজে দীর্ঘদিন সততা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে সম্প্রতি তিনি অবসরে গিয়েছি। কলেজ কমিটির সভাপতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম আবদুল মোমেন এমপি ও সাবেক সভাপতি, ভাষাসৈনিক অধ্যাপক আব্দুল আজিজের অধীনে সুনামের সাথে কাজ করেছেন। কিন্তু অবসরে যাওয়ার পরই তিনি চক্রান্তকারীর খপ্পরে পড়েছেন। শুরু হয়েছে তাঁর ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে নানা মুখী ষড়যন্ত্র। আর সেই ষড়যন্ত্র থেকে রেহাই পেতে সোমবার দুপুরে তিনি সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা এবং সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়েছেন। মো. গিয়াস উদ্দিন তাঁর বক্তব্যে বলেন, অধ্যক্ষ হিসাবে তিনি দায়িত্ব পালনকালে নগরের মুন্সীপাড়ার বাসিন্দা (১০/বি, আলী মঞ্জিল) মোহাম্মদ আব্দুর রউফের ছেলে মো. মাহবুবুর রউফ (নয়ন) ২০১৫ সালের ১৩ জুন বিধি মোতাবেক গঠিত সিলেকশন কমিটির লিখিত ও মৌখিক ফলাফলের ভিত্তিতে ২৭ জুনের গভর্নিং বডির অনুমোদনক্রমে ইংরেজি বিষয়ে প্রভাষক পদে নিয়োগ পান। এরপর তিনি ৪ জুলাই যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি নানা বিতর্কিত কাজ শুরু করেন। কলেজের অর্থনীতি বিভাগের দুইজন প্রভাষক এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগের দুইজন প্রভাষক কর্তৃক তাঁর বিরুদ্ধে পৃথকভাবে ৪টি অভিযোগ দেন। তিনি মইনউদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজে সদ্য চালু হওয়া অর্থনীতি, ব্যবস্থাপনা এবং হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ সম্পর্কে অভিযোগকারীরাসহ সাধারণের মাঝে বিরূপ ও নেতিবাচক বক্তব্য দেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে গমন করে তিনি এই কলেজের তিনটি বিষয়ে (অনার্স কোর্স) নতুন বিভাগ চালুর অনুমতি প্রদান না করার পক্ষে অবস্থান নেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে বাংলাদেশে অনার্স মাস্টার্স শিক্ষক শিরোনামযুক্ত একাউন্টে তার প্রদত্ত মতামত ও মত বিনিময় থেকে ব্যাপারটি অতি পরিষ্কারভাবে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি জানান, গত ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট কলেজ স্টাফ কাউন্সিলের সভায় তার অপেশাদার সূলভ এবং কলেজের স্বার্থ বিরোধী ভূমিকার কারণে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। কলেজের ইংরেজি বিভাগের তিনজন প্রভাষক তার বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি অভিযোগ দাখিল করেন। তিনি একই বিভাগের একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা সহকর্মীর সাথে অসন্তোষমূলক আচরণ করার পাশাপাশি ভয়ভীতিও প্রদর্শন করেন। কলেজে যোগদানের পর থেকে ছাত্রীদের সাথে তার আচরণ, যোগাযোগ ও ব্যবহার মোটেই শিক্ষকসূলভ ছিল না। এজন্যে তাকে ২০১৭ সালের ৩ অক্টোবর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। নোটিশ প্রদানের ৭ দিনের মধ্যেই তিনি তার কৃতকর্মের জন্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। কিন্তু তার চরিত্রে আসেনি কোনো পরিবর্তন। তিনি কলেজ সংলগ্ন একটি বাসায় বেআইনিভাবে কোচিং সেন্টার চালু করেন। ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দিবেন বলে লিখিত অঙ্গীকার করেন। মো. গিয়াস উদ্দিন তাঁর বক্তব্যে আরো বলেন, কলেজের ইংরেজি বিভাগের একজন নারী শিক্ষককে উত্তক্তকরণ, অসামজিক, অসৌজন্যমূক আচরণ করারয় ওই শিক্ষক কোতোয়লি থানায় ২০১৯ সালের পয়লা এপ্রিল সাধারণ ডায়রি করেন। যার নম্বর-৬০/১৯। ক্যাম্পসে ছাত্রীদের অনিচ্ছায় জোরপূর্বক নাচানাচিসহ অশ্লিল অঙ্গভঙ্গি ছাড়াও নানা বিকর্কিত কর্মকন্ডের কারণে ক্যাপাসের ছাত্রীরা, শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটিসহ সকলেই তার প্রতি অতিষ্ট হয়ে পড়েন। ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর গভর্নিংবডির ৯৭তম সভায় প্রথম কারণদর্শানো নোটিশ প্রদানকালে গভর্নিংবডির সিদ্ধান্ত মতে তাকে ১ বছর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। শর্ত ছিল, পর্যবেক্ষণকালে তার বিরুদ্ধে পুনরায় কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলে বিধি মোতাবেক বরখাস্ত করা হবে। পূর্ববর্তী একাধিক অভিযোগ ছাড়াও পর্যবেক্ষনকালে ২০১৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্ভর দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের লিখিত অভিযোগ এবং ২০১৮ সালে এইচএসসি পাবলিক পরীক্ষাচলাকালীন কোচিংসেন্টার পরিচালনার অপরাধে কেন তাকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হবে না এই মর্মে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারী পুনরায় নোটিশ দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ।নোটিশ দেয়ার পর পরই তিনি রূপ পাল্টান। শুরু করেন কলেজ অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন (আমি) ও শিক্ষকদেরকে হুমকি দিতে থাকেন। এক নারী শিক্ষককে হুমকি দেয় ও অশোভন আচরণ করেন। ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি নিজের স্বাক্ষর করা একটি চিঠি কলেজের একটি কক্ষে রেখে যান এই চিঠিতে তিনি আত্মহত্যা করবেন বলে কলেজ কতৃপক্ষকে হুমকি দেন বিষয়টি তাৎক্ষনিক কলেজ কমিটিকে জানানো হয়। কমিটির পরামর্শে আমি ১৮ ফেব্রæয়ারি কোতোয়লি থানায় জিডি ১২৯৫ দায়ের করা হয়। মো. গিয়াস উদ্দিন তাঁর বক্তব্যে বলেন, তার কার্যকলাপে অতিষ্ট ম্যানেজিং কমিটি ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারী তদন্ত কমিটি গঠন করতে বাধ্য হয়। কমিটিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মো. জফির উদ্দিনকে (লেখক ড. জফির সেতু) প্রধান করে ৩ সদস্যে কমিটি তদন্ত মুরু করে। ১৮ ফেব্রুয়ারি দীর্ঘ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির অন্যরা হলেন, অভিভাবক সদস্য শাহ মো. আলতাফুর রহমান ও কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি (বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ) অধ্যাপক মো. এনামুল হক চৌধুরী। তদন্ত প্রতিবেদনে তদন্ত কমিটি অভিযোগকারী ছাত্রী, শিক্ষকবৃন্দ ও ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অভিযোগের গুরুত্ব ও ঘটনা পর্যালোচনা করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ১০টি সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে জানান এবং ১৯ ফেব্রুয়াুর তাকে কলেজের ইংরেজী বিভাগে প্রভাষক (নন এমপিও; অনার্স কোর্সেরজন্য নিয়োগপ্রাপ্ত) মাহবুবুর রউফ (নয়ন)-কে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে কলেজ পরিচালনা পরিষদ। পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল আজিজের সভাপতিত্বে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের সহযোগিতা চেয়ে মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ২০১৮ সালে একটি নীতিমালা হয় যে, ৬০ বছর হয়ে গেলে অবসর নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু এই নীতিমালা প্রনয়নের আগে কালেজের স্বার্থে কলেজের পরিচালনা পরিষদ তার চাকরির মেয়াদ ২ বছর বৃদ্ধি করেন। কলেজের সভাপতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল আজিজ কলেজের স্বার্থেই এটি করেন। ২ বছর বৃদ্ধি করার বিষয়টি আইগতভাবে সম্পূর্ণ বৈধ। ২ বছর পরই গিয়াস উদ্দিন স্বেচ্ছায়-স্বউদ্যোগে কলেজের অধ্যক্ষ পদ ছেড়ে দেন। শহরতলীর ডলিয়ায় তাঁর সাড়ে ১০ শতক জমি ছিল। এর মধ্যে কিছুদিন আগে সাড়ে ৫ শতক জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। বর্তমানে তার নামে শুধু ডলিয়ায় ৫ শতক জমি রয়েছে। সিলেটের কোথাও তার বা আমার স্ত্রীর নামে কিংবা পরিবারের অন্য কারো নামে কোনো সহায়-সম্পত্তি নেই। শাল্লায় বাড়িতে পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদই তাঁর বর্তমান সম্পদ। কিন্তু বরখাস্তকৃত শিক্ষক মাহবুবুর রউফ (নয়ন) বিভিন্ন সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বিভিন্ন অভিযোগ দিয়ে এবং বিভিন্ন মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে সামাজিকভাবে তাঁর চরিত্রহনন করার পাশাপাশি হয়রানীর চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন।
মন্তব্য