শাল্লায় সাম্প্রদায়িক হামলা: প্রতিবাদে উত্তাল সিলেট

সুনামগঞ্জের শাল্লায় সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে উত্তাল সিলেট নগরী। বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) দুস্কাল প্রতিরোধে আমরা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফন্টসহ নানা সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্র ফ্রন্টের মহানগর আহবায়ক সঞ্জয় শর্মার সঞ্চালনায় প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন বাসদ সিলেট জেলা সমন্বয়ক আবু জাফর, বাসদ জেলা সদস্য জুবায়ের আহমেদ চৌধুরী সুমন, ছাত্র ফ্রন্টের সাবেক সভাপতি প্রণব জ্যোতি পাল, পাপ্পু চন্দ, ছাত্র নেতা হৃত্ত্বিক কুমার দেব, নীলয় শর্মা উত্তম, শুভ্র দাস, দীপংকর রায় প্রমুখ। বক্তারা বলেন, শাল্লায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার ২ দিন হলেও প্রশাসন এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। বক্তারা আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে হামলার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করার দাবি জানান। বক্তারা বলেন, হেফাজতের নেতা মামুনুল হকের উসকানি মূলক বক্তব্যের কারণে এই হামলা হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এমন সাম্প্রদায়িক হামলা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সরকার মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে আপোষ করে চলছে। তাই বারবার এমন হামলার ঘটনা ঘটছে। দুস্কাল প্রতিরোধে আমরা: সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনায় হেফাজত নেতা মামুনুল হকসহ জতিড়দের গ্রেপ্তারের দাবিতে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে সম্প্রতিকালে নানা কর্মকান্ডের প্রতিবাদের মধ্যদিয়ে সিলেটে গড়ে উঠা ‘দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’। বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) বিকেল ৪ টায় কেন্দ্রীয় শহিদমিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি জিন্দাবাজার পয়েন্ট ঘুরে শহিদমিনারে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে এসে শেষ হয়। দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’র সংগঠক দেবাশীষ দেবুর পরিচালনায় বক্তব্যে রাখেন- দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’র সংগঠক আবদুল করিম কিম, জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদির আহমদ মুক্তা, সাংস্কৃতিক সংগঠক শামসুল বাছিত শেরো, রিপন চৌধুরী, ভূমি সন্তান বাংলাদেশের সভাপতি আশরাফুল কবির, সিলেট মহানগর সেচ্ছাসেবকলীগের সহ সভাপতি এম রশীদ আহমদ, গণজাগরণ মঞ্চ সিলেটের সংগঠক রাজীব রাসেল, মার্কসবাদী পাঠক ফোরামের সংগঠক নিরঞ্জন সরকার অপু, সংস্কৃতিকর্মী হিতাংশু কর বাবু, তামিগ্রা তিথি, সিলেট জেলা ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি মাসুদ রানা চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক বিজয় করিম, পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা, যুব ঐক্য পরিষদ সিলেট মহানগরের সভাপতি ধণঞ্জয় দাশ ধনু, যুব ছাত্র পরিষদের সদস্য সুপ্রিয় পাল রুপম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা মৃন্ময় দাশ ঝুটন প্রমুখ। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, গতকাল বুধবার (১৭ মার্চ) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে শাল্লায় হামলা ঘটনা ঘটেছে। অথচ পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। প্রশাসন শাল্লায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। আগের দিন মিছিল করার ঘোষণা দিলেও পুলিশ গ্রামে নিরাপত্তা জোরদার করেনি। বক্তারা বিতর্কিত হেফাজত নেতা মামুনুল হককে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বলেন, মুজিববর্ষের শুরুর দিকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়ার হুমকি দিয়ে আলোচনায় উঠে আসেন মামুনুল হক। এরপরও সরকার বিতর্কিত এ নেতাকে গ্রেপ্তার না করে উলটো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মাহফিল করার সুযোগ করে দিচ্ছে। এজন্য মামুনুল হকের বিরুদ্ধে লেখার কারণে শাল্লায় হামলা ঘটনা ঘটেছে। বক্তারা মামুনুল হককে হামলার হুমকিদাতা হিসেবে আসামি করে মামলা দায়ের করে ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। বক্তারা আরও বলেন, ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে এমন সংবাদের ওপর ভিত্তি করে বেশ কয়েক বছর ধরে দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য। প্রায়ই দেখা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে উত্তেজনা বিরাজ এবং হামলার প্রস্তুতি চললেও স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারছে না। অধিকাংশ সময় তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটছে। এসব হামলার ঘটনা সংখ্যালঘুদের মধ্যে চরম অনিরাপত্তা আর আতঙ্কবোধ তৈরি করছে, যা দূর করতে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। হাওর উন্নয়ন পরিষদের মানববন্ধন: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেছেন, ভাটির জনপথের সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলার নোয়াগাও গ্রামে বর্বরোচিত এই হামলা হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি নষ্ট করার পায়তারা করছে মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা। তিনি আরো বলেন, এই স্বাধীনতার মাসে যাতে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী সুষ্ঠুভাবে পালন না করা যায়, সেই জন্য মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা এ ধরনের ন্যাক্কাজনক হামলা চালিয়েছে। অনতিবিলম্বে এসব মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তিনি বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে উগ্র-মৌলভী গোষ্ঠী কর্তৃক হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা, বাড়ির ও মন্দির ভাংচুরের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে হাওর উন্নয়ন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি সিলেটের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। হাওর উন্নয়ন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত বর্মনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খালেদ মিয়ার পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- মহানগর আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক তপন মিত্র, সিলেট জেলা এডিশনাল পিপি এডভোকেট শামসুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা সুদীপ দেব, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এনামুল মুনীর, বিএমবিএফ এর যুগ্ম মহাসচিব মনোরঞ্জন তালুকদার, ছাত্রনেতা অরুন দেবনাথ সাগর, শেখ আক্তার। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. বশির আহমদ, ঋতু রঞ্জন দেব, আওয়ামী লীগ নেতা মো. বেলাল উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন, এডভোকেট বনশ্রী দাস অপু, এডভোকেট সুবল চন্দ্র পাল, ভুলন পাল, আখলাক হোসেন, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ, মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম, মহানগর ছাত্রলীগ নেতা সায়েল আহমদ প্রমুখ।