নন্দিত ডেস্ক:হবিগঞ্জের বাহুবলে পাহাড়ি খাল থেকে অবৈধভাবে বালু তুলছে যুবলীগের ২৩ নেতাকর্মী। স্থানীয় যুবলীগ নেতাকর্মীরা বালু উত্তোলনে জড়িত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না উপজেলা প্রশাসন।
উপজেলার কালিছড়া (পাহাড়ি খাল) থেকে বালু উত্তোলনের কারণে দুটি চা ও রাবার বাগানের টিলা ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চা ও রাবার বাগান কর্তৃপক্ষ বলছে, বালু উত্তোলনের কারণে গত এক বছরে বেশ কয়েকটি ছোট বড় পাহাড়ে ধস ও ফাটল দেখা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ যুবলীগ নেতাকর্মীরা বালু তোলার কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেনা প্রশাসন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় ১০ মাস যাবৎ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন পুটিজুরী ও সাতকাপন ইউনিয়ন যুবলীগের কর্মী ইমরান তালুকদার, আয়মন আলী, জনাব আলী, রিপন মিয়া, হেলাল উদ্দীন, সোহেল মিয়া, আনোয়ার মিয়া, আলমাছ মিয়া, ইসহাক উল্লাহ, আরিফ উল্লা, ওয়াহিদ মিয়াসহ ২৩ জন যুবলীগ নেতাকর্মী।
উপজেলার বৃন্দাবন ও মির্জাপুর নামের দুটি চা বাগানের পূর্ব সীমানা থেকে কালিছড়া ছড়াটি শুরু হয়ে শ্যামলবাড়ি ও সুফি মিয়ার রাবার বাগান এবং দ্য প্যালেস নামের রিসোর্টের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। বৃন্দাবন চা বাগানের কালিছড়া (পাহাড়ি খাল) গিয়ে দেখা যায়, ছড়ার প্রায় ২২টি স্থানে শ্যালো মেশিন ও পাঁচ ছয়টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন চলছে। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, দিনের বেলায় এখান থেকে বালু উত্তোলন করা হয়, আর রাতে ট্রাকে করে বালু বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়। এ ছাড়া বালু ব্যবাসায়ীরা ছড়া থেকে লম্বা পাইপের মাধ্যমে বালু এনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পুটিজুরী বাজার থেকে বড়চর বাজার পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে স্তুপ করে রাখেন। এতে রাতে এলাকায় তীব্র যানজট ও প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগ নেতা ইমরান তালুকদার বলেন, কালিছড়া বালু মহালটি তারা হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এটি এম আফজল এবং একই ইউনিটের যুবলীগ নেতা মোশাহিদ মিয়া ও জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে উপ ইজারা নিয়েছেন।
শায়েস্তাগঞ্জ পৌর যুবলীগের সাধারন সম্পাদক এটি এম আফজল ও মোশাহিদ মিয়া বলেন, তারা খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয় থেকে এক বছরের জন্য ৩০ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন। তবে ইজারার কাগজপত্র দেখতে চাইলে তারা পরে দেখাবেন বলে জানান। পুটিজুরী ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি লুলু মিয়া দাবী করেন, যারা বালু উত্তোলন করছে তারা যুবলীগের কেউ নন।
বৃন্দাবন চা বাগানের এক কর্মকর্তা বলেন, বালু উত্তোলনের কারণে বেশ কয়েকটি ছোট বড় পাহাড়ে ধস ও ফাটল দেখা দিয়েছে। ২০১৫ সালের পর থেকে বাগান কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ছড়াটির ইজারা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ বছর হঠাৎ করে একটি চক্র বালু উত্তোলন করছে। সম্প্রতি ইউএনও বরাবরে বালু উত্তোলন বন্ধে একটি আবেদনও করা হয়েছে।
বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা হক বলেন, প্রশাসন থেকে কাউকে কালিছড়া ইজারা দেওয়া হয়নি। কেউ খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ইজারার নামে ছড়ার অপব্যবহার করতে পারে। এমন ইজারা বাতিলের জন্য খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, উপজেলার শুধু কালিছড়াই নয় বেশ কয়েক জায়গায় অবৈধ ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালু তোলা হচ্ছে। আমাদের অভিযান চলছে, পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ড্রেজার মেশিন। যে ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে তাদেরকে বালু উত্তোলন না করতে বলে দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য