নন্দিত ডেস্ক:হবিগঞ্জের নয়টি উপজেলার শতাধিক স্পটে নিয়মিত বসছে জুয়ার আসর। জেলার বাইরে থেকেও জুয়াড়িরা এসে যোগ হচ্ছে এসব স্থানে। আসরের নেপথ্যে রয়েছে রাজনৈতিক নেতাসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা। প্রতি রাতেই কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। মাঝে মধ্যেই কিছু জুয়াড়িকে পুলিশ আটক করলেও অভিযোগ রয়েছে গডফাদাররা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
জানা গেছে, সন্ধ্যা নামার পরই তাস, গাফলা, লুডু ও মোবাইল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে দোকান-পাঠসহ বিভিন্ন ঝোপ-ঝাড়ে জুয়া খেলার আয়োজন করা হয়। আসর চলে রাতভর। এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ম্যাচ নিয়েও প্রতিদিন হচ্ছে লাখ লাখ টাকার খেলা। এতে জড়িয়ে যাচ্ছে কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। গত ৩ মাসে হবিগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২০টি ডাকাতির ঘটনাসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। জুয়া এবং মাদকের কারণেই অপরাধ বাড়ছে বলে দাবি সচেতন মহলের।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জ শহরের গরুর বাজার, চৌধুরী বাজার, আনোয়ারপুর বাইপাস, শায়েস্তানগর, সদর উপজেলার পইল, কামড়াপুর, রামপুরসহ বিভিন্ন এলাকায়, লাখাই উপজেলার করাব, কালাউক, বামৈ, ভাদিকারা, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নতুন ব্রিজ এলাকার একাধিক স্থান, নিশাপট, ফরিদপুর, রেলস্টেশন, দিঘীর পাড়, বড়চর হাসপাতালের পাশে, নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও শেরপুর, পারকুল, ভাটি শেরপুর, কামারগাঁও, সাইনবোর্ড, আনমনু, বাহুবল উপজেলার নন্দনপুর, মিরপুর, বাহুবল সদর, কবিরপুর, বানিয়াচং উপজেলার নতুন বাজার, বড় বাজার, যাত্রাপাশা, ইমামবাগ, জাতুকর্ণপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে, আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও, বদলপুর, জলসুখা, শিবপাশা, পৌর এলাকার মধ্য বাজার, মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী, রাজনগর, ধর্মঘর, মোহনপুর, মনতলা, শ্রীধরপুর, তেলিয়াপাড়া চা-বাগান, নোয়াপাড়া চা-বাগান, চুনারুঘাট উপজেলার সাদ্দাম বাজারের পার্শ্ববর্তী এলাকা, বাসুল্লা বাজারের দক্ষিণ দিকের মাঠ, আমুরোড কালামন্ডল, আসামপাড়া ও টেকের ঘাট গ্রামের বিভিন্ন স্থানে বসছে জুয়ার আসর।
এসবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকার জুয়া হচ্ছে বাহুবলের মিরপুর ও আজমিরীগঞ্জের কাকাইলছেও এলাকায়। ওয়ান-টেন এবং ভারতের এন্ডিং জুয়ার মাধ্যমে প্রতি রাতেই নিঃস্ব হচ্ছে এলাকার বিভিন্ন মানুষ। অন্যদিকে বিভিন্ন গলি এবং দোকানপাটে বসে ক্রিকেট ম্যাচের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলা হচ্ছে প্রতিদিন।
স্থানীয়রা জানান- উল্লেখিত এলাকাগুলোতে প্রভাবশালীরা বিভিন্ন ধরনের জুয়ার আসর বসায়। এতে স্থানীয় কলেজগামী ছাত্রসহ উঠতি বয়সের যুবকরা এসবে গিয়ে সর্বস্ব খুইয়ে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযানে কিছু জুয়াড়িকে আটক করলেও গডফাদারদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের। সম্প্রতি জেলাজুড়ে চুরি-ডাকাতি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হিসেবে এ জুয়াকেই ধরে নিচ্ছেন সচেতন মহল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, এসব স্থানে প্রায় প্রতিদিনই জুয়ার আসর বসছে বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। শিগগিরই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ উল্ল্যা বলেন, হবিগঞ্জের কোথাও বড় পরিসরে জুয়ার আসর বসছে না। ঘরে অথবা ঝোপ-ঝাড়ে বসে জুয়া খেলারোধে সবাইকে সচেতন করতে হবে। ইতোমধ্যে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রায় আড়াইশ’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অপরাধবিরোধী প্রচারণা এবং পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রম চলমান থাকলে এসব কমে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
মন্তব্য