হবিগঞ্জ প্রতিনিধি :: হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদীর চর কেটে আবারও বালু বিক্রি শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে ওই নদীর চর কেটে বালু বিক্রি করছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। এমনকি কোনো ধরণের ইজারা ছাড়াই উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের কসবা গ্রামে দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে এ ঘটনা ঘটছে। এর ফলে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। এর আগে নবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসক অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তারের পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা প্রদান করলে কিছু দিন বন্ধ ছিল এই বালু উত্তোলন।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ বিন-হাসান বলেন, বিষয়টি এর আগে আমাদের নজরে আসে। আমরা তাৎক্ষণিক অভিয়ান চালিয়ে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করি এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়। ফের যদি কেউ চর কেটে বালু বিক্রি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই সরকারের সম্পদ চুরি করে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে। যদিও উপজেলা প্রশাসন অভিযোগ অস্বীকার করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার দীঘলবাঁক ইউনিয়নের বুক চিরে প্রবাহিত কুশিয়ারা নদীতে বর্তমান সময়ে পানি না থাকায় কসবা গ্রামে বিশাল চর জেগেছে। কয়েকমাস ধরে বিশাল স্থান নিয়ে জাগা এই চরে স্থানীয় ৪-৫টি সংঘবদ্ধ প্রভাবশালী চক্র কসবা গ্রামের কুশিয়ারা নদী ঘাট এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। প্রতিদিন ওই সঙ্ঘবদ্ধ চক্রের অর্ধশতাধিক শ্রমিক নদীর চর কেটে ট্রাকে বালু তুলে দেন। বালুগুলো বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয়। নদীর চর থেকে প্রতি ট্রাক বালুর দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক বালু বিক্রি করা হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর চরের বালু বিক্রি করে সঙ্ঘবদ্ধ কুচক্রী মহল লাভবান হলেও কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছত্রছায়ায় সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। অন্যদিকে বন্যা কবলিত এলাকায় নদীর চর কাটার ফলে আগামী দিনে বন্যার কবলে দীঘলবাক এলাকার আরো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে।
সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার সময় কোদাল দিয়ে নদীর চর থেকে বালু কাটার সময় কথা হয় ৬৫ বৎসরের এক বৃদ্ধ শ্রমিকের সাথে। তিনি বলেন, তোমরা কেনে আইছো। কত বড় বড় রাগব বোয়াল আইয়া অখান তাকি ফিরিয়া গেছইন। তোমরা পত্রিকাত লেখিয়া কী হইবো!। পত্রিকায় লেক্কিয়া কিচ্ছু অইতো নায়। কামকা আইছো রে বাবা, যাওগি যাও। এক পর্যায়ে প্রতিবেদক কার কার নেতৃত্বে চর থেকে বালু কাটা হচ্ছে জানতে চাইতে নাম জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে বালু কাটা বন্ধ করে শ্রমিকরা চলে যান। এদিকে বন্যা কবলিত এলাকা হিসেবে দীঘলবাক ইউনিয়নে গত বছর প্রায় কয়েক শতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ি পানির নিচে তলিয়ে যায়। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হওয়া সত্ত্বেও কী ভাবে প্রকাশ্যে এ ইউনিয়নে নদীর চর কেটে অবাধে বালু বিক্রি করা হচ্ছে এনিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। অন্যদিকে নদীর চর থেকে প্রকাশ্যে ক্ষমতার দাপটে সরকারি সম্পদ চুরি করে বিক্রি করার বিষয়ে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে নানা আলোচনা দেখা দিয়েছে। একাধিকবার প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পরও কোনো স্থায়ী ফলাফল না আসায় প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ জানিয়েছেন সচেতন মহল।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, নদী মাতৃক আমাদের এই বাংলাদেশ। কিছু অসাধু লোকজনের কারণে নদীর চর কেটে বালু বিক্রি করার উৎসব চলছে। কুশিয়ারা নদীর একটি অংশ নবীগঞ্জের বন্যা কবলিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত দীঘলবাক ইউনিয়নের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত। একের পর এক নদীর চর কেটে বালু বিক্রি করার ফলে এলাকাটি বন্যা কবলিত এলাকা হিসেবে আরো বেশি ঝুকিঁপূর্ণ হয়ে উঠছে। তাই দ্রুত চর কাটা বন্ধে প্রশাসন সোচ্চার হবে বলে আশাবাদী।স্থানীয় দীঘলবাক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ এওলা মিয়া বলেন, কসবায় কুশিয়ারা নদীর চর কেটে বালু বিক্রির বিষয়টি আমার জানা নেই। যেহেতু সংবাদকর্মীরা আমার নজরে দিয়েছে আমি শিগগিরই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এবং আগামী আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে এ বিষয়টি তুলে ধরবো।
নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতাউল গনি ওসমানী চর কেটে বালু বিক্রির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এখানে একাধিক পক্ষ কুশিয়ারা নদীর তীর থেকে অবৈধভাবে বালু বিক্রি করে আসছে। এ ব্যাপারে কিছুদিন পূর্বে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি এবং বালুর স্তুপ জব্দ করা হয়। চর থেকে বালু বিক্রি বন্ধে দ্রুত পুলিশের নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ বিন হাসান বলেন, কিছুদিন পূর্বে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে নদীর চর থেকে বালু কাটা ও বিক্রি বন্ধ করা হয় এবং বালু জব্দ করা হয়।
মন্তব্য