‘বর্বরোচিত এই হত্যাকান্ড আমাদের অতীত ঐতিহ্য ম্লান করেছে’

সিলেটে কলেজছাত্র আরিফুল ইসলাম রাহাত হত্যাকান্ডে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার না করলে আন্দোলনে নামবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। রাজপথে শিক্ষার্থীরা নেমে গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। এর দায়ভার আইনশৃংখলা বাহিনীকেই বহন করতে হবে। রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এমন হুশিঁয়ারি দেন দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ শামছুল ইসলাম। কলেজের অধ্যাপক মোস্তাক হোসেন শিক্ষাবিদ সম্মিলন কেন্দ্রে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অধ্যক্ষ শামছুল হক বলেন, প্রকাশ্যে হত্যাকান্ডের পরও এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে না পারাটা দুঃখজনক। এর ফলে আইনশৃংখলা বাহিনীর ভাবমূর্তিও সংকটে পড়বে। অবিলম্বে আমাদের ছাত্র আরিফুল ইসলাম রাহাতের ঘাতকদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা না হলে দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ শিক্ষার্থীরা মাঠে নামবে। তখন পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। তিনি বলেন, রাহাত অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। এবছর সে এইচএসসি পরীক্ষা অংশগ্রহণ করার কথা ছিল। তাঁকে নির্মমভাবে হত্যায় আমরা শোকাহত, ভাষা হারা। দক্ষিণ সুরমা কলেজ প্রতিষ্ঠার পর এটি প্রথম হত্যাকান্ড। বর্বরোচিত এই হত্যাকান্ড আমাদের অতীত ঐতিহ্য ম্লান করে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, রাহাতের ঘাতক কলেজে বর্তমানে অধ্যয়নরত না। সে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিল। এখন সে আমাদের ছাত্র না। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, ঘটনার দিন সকাল ৯টায় যথারীতি আমি কলেজ থেকে নির্ধারিত ৪৩ তম বিসিএস'র প্রিলিমিনারী পূর্ব প্রস্তুতি সভায় যোগদানের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাই। সেখানে সভা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে ১টা ৩৫ মিনিটে একজন শিক্ষক কলেজ থেকে কল দিয়ে ঘটনার খবর দেন। এরপর দ্রুত কলেজে চলে আসি। শিক্ষকদেরকে নিয়ে রাহাতকে দেখতে তাৎক্ষণিকভাবে ওসমানী হাসপাতালে যাই। রাহাতের শোকাহত স্বজনদের সমবেদনা জানাই। তাছাড়ও বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে দক্ষিণসুরমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ আইনশৃংখলা বাহিনীকে অবগত করি। অধ্যক্ষ শামসুল আরও বলেন, হত্যাকান্ডের ঘটনায় তাৎক্ষণিক উপস্থিত সকল শিক্ষকদের নিয়ে সভা করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ৩ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তাছাড়া এই ঘটনার প্রেক্ষিতে গতকাল শনিবার কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবের উপস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক আজকের সংবাদ সম্মেলনসহ আগামী ৩০ অক্টোবর নিহত রাহাতের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল, তাঁর পরিবারকে আর্থিক সহায়তা এবং ৪৩তম বিসিএস প্রিলিমিনারী পরীক্ষার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে আগামী ২৭ ও ২৮ অক্টোবর পাঠদান বন্ধ থাকবে। কলেজের ইতিহাস তুলে ধরে অধ্যক্ষ শামছুল ইসলাম বলেন, সিলেটজুড়ে দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজ শিক্ষার দিক দিয়ে সুনাম অর্জন করে আসছে। কলেজ ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ। ১৯৮৯ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠা হয়। ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গেজেটের মাধ্যমে কলেজটি জাতীয়করন বা সরকারি করা হয়। বর্তমানে কলেজের ৮ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে একটি স্বার্থান্বেষীমহল তাদের ফায়দা হাসিলের জন্যে অপতৎপরতা শুরু করে। আমরা এদেরকে প্রতিরোধ করে আসছি। কিন্তু ওই মহল থেমে নেই। তারা তাদের অপতৎপরতা এখনো চালিয়ে যাচ্ছে। বিগত দিনে ছোটো খাটো নানা ঘটনা ঘটলেও এমন ঘটনা আর ঘটেনি। কলেজ প্রতিষ্ঠার পর এটিই প্রথম হত্যাকান্ড। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজরী রানী ধর, শিক্ষক সাব্বির আহমদ, আশরাফুল হক, রাহেনা হক, ছালমা ইয়াছমিন, মতিলাল দাশ, মুহিবুর রহমান, আতাউর রহমান, সুভাষ চন্দ্র সাহা, জয়নুল ইসলাম, পলাশ রঞ্জন দাশ, ময়নুল হক, শ্যামলী চক্রবর্তী, নাফিস সাকিনা, কানিজ ফাতেমা, শুকরিয়া জাহান, ফাতেমা খানম, শিল্পী মালাকার, মাহমুদা আক্তার, শাহরিয়ার খান, গিলমান আলী, আতাউর রহমান ভূঞা, শফিকুল ইসলাম, নুসরাত ফাতেমা, মাহবুবা বেগম, বিশ্বজিৎ ধাম, খালেদ আহমদ, শাহ আলম, রেজওয়ানা তাসলিম, মোস্তাফিজুর রহমান, আব্দুল বাতেন, আব্দুন নুর শামীম উপস্থিত ছিলেন।