৫৩ দিনের ‘ছুটি’ ৪৮ ঘণ্টায় শেষ, ক্রিকেট ক্লাসে ফিরছেন সাকিব!

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) একজন কর্মীর পেছনে ছুটছেন সংবাদকর্মীরা। এই কর্মীর হাতে সাকিবের জার্সি-ট্রাউজার। তার গাড়িতে রাখার জন্য নিয়ে এসেছেন বিসিবি কার্যালয় থেকে। একটু আগেই নাজমুল হাসান-সাকিব আল হাসানের ঘোষণার সঙ্গে এই দৃশ্যটির নিদারুণ মিল। সাকিব শুধু দক্ষিণ আফ্রিকাতেই যাবেন না; সঙ্গে নিয়ে যাবেন তার নিজের জার্সি-ট্রাউজারও।

আফগানিস্তান সিরিজের পরদিন রোববার (৬ মার্চ) থেকে শুরু হয় এই নাটক। শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে সাকিব অনাগ্রহ প্রকাশ করেন ক্রিকেট খেলার প্রতি। জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার জন্য প্রস্তুত না। এই বিস্ফোরক মন্তব্যের পর চারদিকে শুরু হয় হট্টগোল। মেনে নিতে পারেননি খোদ বিসিবি সভাপতিও। সবকিছু মেনে নিয়ে তারপরও সাকিবকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি দেয় বোর্ড। কিন্তু আলোচনা-সমালোচনা থামেনি।

দুবাই থেকে বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) ফেরার পর থেকে পাল্টাতে থাকে দৃশ্যপট। সাকিব বিমানবন্দরে নেমেছেন রাত সোয়া ৯টায়, তার দুই ঘণ্টা আগে বিসিবি সাকিবকে তিন ফরম্যাটে রেখে কেন্দ্রীয় চুক্তি ঘোষণা করে। এতেই বোঝা যায় দুই পক্ষই ওড়াতে চাচ্ছেন শান্তির পতাকা; সাদা পতাকা। একদিন না যেতেই তাই হলো। দুবাই থেকে এসে সাকিব ফোন দিয়েছিলেন নাজমুলকে। জানিয়েছেন তিনি খেলতে চান। নাজমুল বলেছেন সময় নিতে। পরদিন শুক্রবার আবারও ফোন দেন সাকিব, নাজমুল জানান ঠিকাছে ‘বোর্ডে আসো, কথা হবে।’

তারই প্রেক্ষিতে আজ শনিবার (১২ মার্চ) দুপুরে বৈঠক চলে নাজমুল-সাকিবের মধ্যে। সঙ্গে ছিলেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরীসহ বিসিবির পরিচালকরা। দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে দুই পক্ষ আসেন সংবাদ সম্মেলনে। কথা শুরু করেন নাজমুল হাসান। এক পর্যায়ে সাকিবের মুখেই তার সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য বলেন।

সাকিব বলেন, ‘পাপন ভাইর সাথে গত পরশু রাতে, কালও, আজও বোর্ডে কথা হয়েছে। আমরা পুরো বছরের পরিকল্পনা করতে পেরেছি। যেহেতু আমি তিনটা ফরম্যাটেই আছি, আমি তিন ফরম্যাটেই সবসময় এভেইলেবল থাকবো। বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে কোন সময় আমাকে বিশ্রাম দেওয়া জরুরি কিংবা দেওয়া দরকার। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকেই এটা হবে। তো আমি দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেও এভেইলেবল।’

সাকিবের কথা শেষেই মাইক্রোফোনের সামনে আবার আসেন বিসিবি সভাপতি। সাকিবের বক্ত্যব্যের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন কথা বলতে থাকেন নাজমুল। সাকিবকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত দেখার কথা জানিয়ে তার পাশে থাকার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, তাকে সমর্থন দেওয়ার জন্য সকলকে আহ্বান করেন নাজমুল। আর এর মাধ্যমেই সাকিবের এই বিষয়টর অবসান চান।

নাজমুল বলেন, ‘পরশু এসে আমাকে ও যে জিনিসটা বলেছে- ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমাদের সবারই কোনো না কোনো সময় এরকম হয়। মানুষ মেন্টালি ডিস্টার্বড থাকতেই পারে। আপনারা অনেক কারণ বের করে নিচ্ছেন- এটার জন্য, ওটার জন্য... এরকম কিছু না। যেকোনো মানুষেরই এমন জিনিস থাকতে পারে যেটা কেউ জানেই না। ও মানসিকভাবে একটু বিপর্যস্ত এজন্য সিদ্ধান্ত নিতে একটু সমস্যা হচ্ছে। সে নিজেই তো স্বীকার করেছে সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হচ্ছিল। এটা যখন বলেছে এরপর তো আর কোনো কথা নেই। আমাদের টোটাল প্রোগ্রাম দেখে বলেছে আমি সব ফরম্যাটে খেলতে চাই।’

‘একটা দুইটা সিরিজ যদি কেউ না করে, এটা নিয়ে এত হৈচৈ এর কিছু নেই। এমনও হতে পারে বোর্ডও অনেক সিরিজে কাউকে রাখবে না, ড্রপ দিয়ে নতুন কাউকে যাচাই করতে পারে। অনেক খেলোয়াড় কোনো সিরিজে না-ও খেলতে পারে, তার অসুবিধা থাকতেই পারে। এটাকে আপনারা স্পোর্টিংলি নিন। এটা খেলারই অংশ। এটাই সারা পৃথিবীতে হয়ে আসছে। এই সময়টায় আমাদের সবার সাকিবকে সাপোর্ট দেওয়া উচিৎ’-আরও যোগ করেন নাজমুল।

সবকিছু অবসান হয়েছে। সাকিব দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছেন কাল রাতে। এর মধ্যে তিনভাগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিমান ধরেছেন মুমিনুল হকরা। ক্রিকেটারের মধ্যে সাকিব একাই যাবেন দক্ষিণ আফ্রিকায়।

ওখানে খেলার কথা জানিয়ে সাকিব বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে তার মানসিকতা ভালোও হতে পারে। পুরো দেশই তো তাই চায়, মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে সাকিব ফিরুক পুরোদমে। গত বুধবার জালাল ইউনুস ঘোষণা দিয়েছেন সাকিবের ছুটির কথা। দিন হিসেব করলে ৫৩ দিন। তার ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টা (দুই দিন) না যেতেই শেষ হয়ে যায় ৫৩ দিনের ছুটি। সাকিব ফিরছেন তার ক্লাসে, ক্রিকেট ক্লাসে!