হবিগঞ্জে শ্রেণিকক্ষে ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি, শিক্ষক গ্রেফতার

হবিগঞ্জের লাখাইয়ে স্কুলছাত্রীকে একাধিকবার শ্লীলতাহানির ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। শুক্রবার র‌্যাব-৯ সিপিসি-১ হবিগঞ্জের একটি দল তাকে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার সানারপাড় এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতার শিক্ষক মুমিনুল হক (৩৭) লাখাই উপজেলার একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব-৯ সিপিসি-১ হবিগঞ্জের কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার মোহাম্মদ নাহিদ হাসান। তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার শিক্ষক মুমিনুল হক র‌্যাবের কাছে ওই ছাত্রীকে একাধিকবার জোরপূর্বক শ্লীলতাহানি করেছেন বলে স্বীকার করেছেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে তিনি নারায়ণগঞ্জে গিয়ে আত্মগোপন করেছিলেন।

র‌্যাব জানায়, শ্লীলতাহানির শিকার ওই ছাত্রী ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী। শিক্ষক মুমিনুল হক অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায়ই ওই ছাত্রীর প্রতি কুনজর দেন। প্রায় সময়ই তিনি বিভিন্নভাবে তাকে উত্ত্যক্ত করতেন। তাকে শ্লীলতাহানি করেছেন একাধিকবার। এ কারণে ওই ছাত্রী শিক্ষক মুমিনুলকে এড়িয়ে চলতেন।

বিষয়টি ছাত্রীর পরিবারকে জানালে পরিবার তাকে নীরবে মোকাবেলা করার পরামর্শ দেয়। গত ১৬ মার্চ সকালে স্কুলের প্রাত্যহিক সমাবেশ (এসেম্বলি) শুরু হলে ওই ছাত্রী শারীরিক অসুস্থতা বোধ করায় এসেম্বলিতে না গিয়ে স্কুল ভবনের তৃতীয় তলায় শ্রেণিকক্ষে বসেছিলেন। সঙ্গে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিল।

এ সময় সহকারী শিক্ষক মো. মুমিনুল হক গিয়ে অন্য শিক্ষার্থীদের বের করে দেন। তিনি ওই ছাত্রীর কাছে গিয়ে অশ্লীল যৌন ইঙ্গিত প্রদর্শন করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তার হাতে ধরেন। এ সময় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন এবং আয়া গৌড়ী সেখানে গেলে মুমিনুল হাত ছেড়ে দিয়ে নিচে নেমে পড়েন।

শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন ও আয়া গৌড়ী নেমে পড়লে তিনি ফের গিয়ে ওই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির উদ্দেশ্যে জড়িয়ে ধরেন। তখন ওই ছাত্রী চিৎকার শুরু করলে মুমিনুল হক তার মুখ চেপে ধরেন। তার চিৎকার শুনে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আব্দুল করিমসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে গেলে মুমিনুল ওই ছাত্রীকে ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করেন। বিষয়টি তাৎক্ষনিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ চৌধুরীকে জানানো হয়।

এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে বরখাস্ত ও তার বিচার দাবিতে শিক্ষার্থীরা হবিগঞ্জ-লাখাই-সড়াইল-নাসিরনগর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শরীফ উদ্দিন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে।

এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে লাখাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর থেকে আত্মগোপন করেন শিক্ষক মুমিনুল হক। শুক্রবার র‌্যাব অভিযান চালিয়ে তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে।