বন্যায় ১২ দিনে ২২ জনের প্রাণহানি দুই উপজেলায়

বন্যায় ১২ দিনে ২২ জনের প্রাণহানি দুই উপজেলায়

সুনামগঞ্জের ছাতক-দোয়ারাবাজারে ভয়াবহ বন্যায় ২২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। দুই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নৌকাডুবির ঘটনা, পানির স্রোতে ভেসে ও বজ্রপাতে গত ১২ দিনে নারী-পুরুষ, শিশুসহ ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।

গত ১৩ জুন থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত ১১ দিনের মধ্যে দুই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানির স্রোতে তলিয়ে গিয়ে ও বজ্রপাতে এসব মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ, হাসপাতাল, পরিবার ও স্থানীয় সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে এসব নিশ্চিত করেছেন।

সর্বশেষ গত শুক্রবার স্থানীয় হাওড় থেকে মখলিছুর রহমান (৪৬) নামের একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি উত্তর খুরমা ইউনিয়নের নাদামপুর-বিলচরা গ্রামের রমজান আলীর ছেলে। এর দুই দিন আগে বাড়ির পাশে গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় প্রবল স্রোতের টানে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হন তিনি।

এর আগে বন্যার পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের মুক্তিরগাঁও গ্রামের শরিফ হোসেনের পুত্র তমাল আহমদ (১৯), নৌকাডুবিতে ছৈলা-আফজলাবাদ ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের আহমদ আলীর ছেলে খালেদ আহমদ (৩০), বজ্রপাতে দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের জাতুয়া গ্রামের উমেশ দাসের ছেলে অশোক দাস (২০), স্রোতে ভেসে গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের দিঘলী গ্রামের সুনীল রায়ের ছেলে অজিত রায় (২২), নৌকাডুবির ঘটনায় সিংচাপইড় ইউনিয়নের কালিপুর গ্রামের নুরুজ্জামানের শিশুকন্যা হানিফা বেগম (৯), নৌকা থেকে নদীতে পড়ে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার আলীপুর গ্রামের বাসিন্দা সুরুজ আলীর ছেলে নৌকা শ্রমিক হাফিজ আলী (৩২) ও পানিতে ডুবে পৌরসভার ব্যবসায়ী ও বাগবাড়ি আবাসিক এলাকার প্রাণেশ দের পুত্র পীযুষ দের (৪৮) মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।

ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান জানান, থানা পুলিশের হিসেব অনুযায়ী নৌকা থেকে পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে আরও মৃত্যু হলেও থানার রেকর্ডে এদের নাম নেই।

এছাড়া ১৩ জুন দোয়ারাবাজার উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়নের কড়ালিয়া গ্রাম সংলগ্ন হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে নৌকাডুবিতে আবদুল হাসিম (৫৫) মারা যান। তিনি ভবানিপুর গ্রামের মৃত হাছন আলীর ছেলে। ১৫ জুন স্কুলে যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে মারা যায় তামান্না আক্তার (১৬) ও তার ভাই সৌরভ মিয়া (১০)। দুই সহোদর রাজনগর গ্রামের ময়না মিয়ার সন্তান।

একই দিনে পুকুরে গোসল করতে গিয়ে বজ্রপাতে মৃত্যু হয় শুকুর আলী ওরফে আবদুন নুরের (২১)। সে দক্ষিণ কলোনির নোয়াব আলীর পুত্র। টেংরা উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে নৌকাযোগে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে সাদ্দাম হোসেন (৩৫) ও জরিফ হোসেন (১৫) নামের দুই সহোদরের মৃত্যু হয়। তারা টেংরাটিলা গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে।

১৬ জুন নিজ বসতঘরে পানি উঠায় বিছানা থেকে পানিতে পড়ে ঘরের মধ্যে মারা যান খুশি রানী দাস (৬০)। তিনি মান্নারগাঁও ইউনিয়নের পুটিপশি গ্রামের মৃত নিত্য নন্দনের স্ত্রী। ১৭ জুন বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল যোগে নিজ কর্মস্থলে যাওয়ার পথে বন্যার পানির প্রবল স্রোতে ভেসে গিয়ে মারা যান এসএমপির ট্রাফিক পুলিশ আবুল কাশেম (৩৮)। তিনি টেংরাটিলা গ্রামের মৃত তাহের উদ্দিনের পুত্র।

১৮ জুন কুমারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে ইমাম উদ্দিন (৬৫) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তিনি দোহালিয়া ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের মৃত ছিদ্দেক আলীর পুত্র। ওই দিন নৌকাডুবিতে সাদমান হোসেন নামের ৪ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে শরিফপুর গ্রামের জমির হোসেনের পুত্র। বাংলাবাজার ইউনিয়নে প্রচণ্ড বৃষ্টির সময় বসত বাড়ির টিলা ধ্বসে হনুফা বেগম (৫০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। তিনি পেকপাড়া গ্রামের মৃত আবদুর রশিদের স্ত্রী। চেলা নদীতে লাকড়ি সংগ্রহ করতে গিয়ে বজ্রপাতে শফিক মিয়া (৩২) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। তিনি নরসিংপুর ইউনিয়নের পূর্বচাইরগাঁও গ্রামের মৃত শাহাব উদ্দিনের পুত্র।

ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করায় হেঁটে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার পথে পানির প্রবল স্রোতে ভেসে গিয়ে মারা যান আনফর আলী (৪৪) নামের একজন। তিনি লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের জিরারগাঁও গ্রামের মৃত সুরুজ আলীর পুত্র। পানির প্রবল স্রোতে ভেসে গিয়ে জাহানারা বেগম (৬০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। তিনি বোগলাবাজার ইউনিয়নের আলমখালি গ্রামের মৃত কালা মিয়ার স্ত্রী।

দোয়ারাবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেবদুলাল ধর বন্যার সময় ১২ দিনে ১৪ জনের মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক জানিয়েছেন, ছাতক-দোয়ারাবাজারে বন্যার পানিতে ভেসে, নৌকাডুবি ও বজ্রপাতে ২২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।