সম্প্রীতির বন্ধন’ গড়তে মাঠে সিলেটের ডিসি


দুর্গাপূজা সামনে। অঘটন থেকে বাদ যায় না

সিলেটও। ঘটে নানান ঘটনা। পূজা চলাকালীন সময়ে টেনশন থাকে সবার। সুযোগ সন্ধানীরাও খোঁজে পথ। এই পথকে বন্ধ করে দিতে আগে থেকেই উদ্যোগ নিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান। সিলেট জেলায় করছেন ‘সম্প্রীতি সমাবেশ’। করছেন কমিটিও। এতে অন্তর্ভুক্তি থাকছে সব মহলের। প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘এটি কেবল পূজাকেই কেন্দ্র করে নয়, এই বন্ধন গোটা বছরই বহাল থাকবে।’ সিলেটকে বলা হয় সম্প্রীতির শহর।এখানে ধর্মীয়, রাজনৈতিকসহ নানাভাবে সম্প্রীতি বিরাজমান। আদিকাল থেকেই এ অবস্থা বিরাজমান রয়েছে। কিন্তু মাঝেমধ্যে জমি সংক্রান্ত ও পূর্বের নানা ধরনের বিরোধকে কেন্দ্র করে দুর্গাপূজার আগে ও পরে ঘটনা ঘটে থাকে। এ নিয়ে উত্তেজনাও তৈরি হয়। এবারের দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে আগে থেকেই সক্রিয় হয়েছে সিলেটের প্রশাসন। এতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান। পরপর দু’বারের বন্যায় সিলেটবাসীর মন জয় করেছেন জেলা প্রশাসক মজিবর। তার নেতৃত্বে সিলেটে উদ্ধার, পুনর্বাসন এবং ত্রাণ কার্যক্রম চলেছে।হয়নি কোনো বির্তকও। বন্যার সময় তিনি জেলার ১৩টি উপজেলা চষে বেড়িয়েছেন। বিশেষ করে ত্রাণ নিয়ে গেছেন দুয়ারে দুয়ারে। এখন সিলেটের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। রাজনৈতিক উত্তেজনাও নেই। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলনে থাকলেও বাধা ছাড়াই তারা কর্মসূচি পালন করছেন। পরিবেশ শান্ত। এরপরও দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে সিলেটের সম্প্রীতির বন্ধন গড়তে কাজ শুরু করেন জেলা প্রশাসক। প্রথমেই তার কার্যালয়ে জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দদের নিয়ে বৈঠক করেন। ওখানে নেন পরামর্শ। সবার সহযোগিতা কামনা করেন। পাশাপাশি বিভাগীয় প্রশাসন, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি, সিলেট জেলা পুলিশ প্রশাসন ও মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রশাসনসহ প্রশাসনের সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা একীভূত হয়েছেন। এরপর শুরু করা হয়েছে উপজেলা পর্যায়ের সম্প্রীতি সমাবেশ। প্রতিদিন সিলেটে কোনো না কোনো উপজেলায় এ সমাবেশ হচ্ছে। আর এতে অংশ নিচ্ছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার নিশারুল আরিফ, জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন। তার উপস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এই সম্প্রীতির বন্ধন গড়তে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এরইমধ্যে সিলেটের কানাইঘাট ও জকিগঞ্জের দুটি সম্প্রীতি সমাবেশ নজর কেড়েছে সবার। দুটি সমাবেশে দুই উপজেলার সব শ্রেণি-পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। আসন্ন পূজায় সম্প্রীতি বজায় রাখতে তারা অঙ্গীকারও করেছেন। সিলেটের জকিগঞ্জে সমাবেশকালে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন, ‘আমরা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করি। আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করি। কোনো অবস্থাতেই অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না। আমরা সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ গড়তে চাই। অনেক তথ্য আমাদের কাছে আছে। মানুষ অনেক সচেতন। সব তথ্য যাচাই করে কাজ করবেন। আমরা চাই শান্তিতে থাকতে।’ এ সময় তিনি জানান, ‘পুরো সিলেট বিভাগে পূজামণ্ডপ আছে ৬১১টি। এরমধ্যে জকিগঞ্জ উপজেলায় আছে ১০৭টি। আশা করি সুন্দরভাবে পূজা উদ্‌যাপন হবে। কোনো অনিয়ম হলে প্রশাসনের লোকদের খবর দিন। আইন মেনে চলুন। কেউ দায়িত্বহীন কাজ করবেন না।’ জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানান, ‘আমরা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কাজ করছি। সব ধর্মের, সব সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রে বসবাস করি। আমরা সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছি। দেশের উন্নয়নের জন্য সবাই একত্রে কাজ করবো। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে সবাই একত্রে কাজ করবো। দেখেছি জকিগঞ্জের বেশিরভাগ জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। আমরা একটু জায়গাও ফাঁকা রাখবো না।’