অপেক্ষার প্রহর শেষ। শুরু হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় আয়োজন অমর একুশে বইমেলা। বাঙালির প্রাণের মেলা লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের মিলনমেলা। বাঙালি জাতিসত্তার আবেগ আর ভালোবাসার নিগূঢ় মিশ্রণ। যে মেলা বরাবরই রূপ নিয়েছে সার্বজনীনতায়। সারা বছর বইপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে অমর একুশে বইমেলা। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল এলাকাজুড়ে অনুষ্ঠিত হয় এ বইমেলা। বিগত দুই বছর করোনা মহামারির কারণে বইমেলা শুরু হয়েছে নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে। মেলার পরিধি ও ব্যাপ্তিও ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় সীমিত। তবে করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হওয়ায় এবার মেলা শুরু হতে যাচ্ছে নির্ধারিত সময়েই।
গতকাল সরজমিন মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, স্টল নির্মাণের শেষ করে বেশির ভাগ প্রকাশনী বই তুলতে ও স্টলে ব্যস্ত সময় পার করছেতবে কিছু কিছু স্টল ও প্যাভিলিয়নে এখনো চলছে শেষ মুহূর্তের নির্মাণযজ্ঞ। মূলত মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে বড় বড় সব স্টল ও প্যাভিলিয়নরা অংশগ্রহণ করে। সেখানে গিয়েও দেখা যায় শেষ সময়ের তোড়জোড়। মেলা শুরু হওয়ার আর কয়েক ঘণ্টা বাকি থাকলেও জনপ্রিয় ঐতিহ্য প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নটি এখনো পূর্ণ অবয়ব পায়নি। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন কাজ চলবে পুরো রাত। মেলা শুরুর আগেই ক্রেতা দর্শনার্থীদের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হবে প্যাভিলিয়নটি।মেলার শিশু চত্বরের স্থান পরিবর্তন করে এবার মূল ফটকের একেবারে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রায় অর্ধশত স্টল নিয়ে গড়ে ওঠা শিশুদের প্রধান আকর্ষণের এই চত্বরও প্রস্তুত হচ্ছে বইমেলার জন্য। বইবাড়ী প্রকাশনার স্টল নির্মাণ কাজে নিয়োজিত সাজেদুল বলেন, আমরা একাধিক স্টল নির্মাণের কাজ করছি। সবকটির নির্মাণ শেষ পর্যায়ে। আশা করছি মেলা শুরুর আগে সবকটি বুঝিয়ে দিতে পারবো।
মেলার বাংলা একাডেমি অংশে আজ প্রধানমন্ত্রীর আগমন নির্বিঘ্ন করতে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর উপস্থিতি দেখা যায়। র্যাব, পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্যরা মেলার মূলমঞ্চ ও এর আশপাশের এলাকায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। আজ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সেরে রাখছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ।
এদিকে গত দুই বছর করোনার কারণে প্রত্যাশা অনুযায়ী বই বিক্রি না হওয়ার হতাশা ছিল লেখক ও প্রকাশনার সংস্থাগুলোর। এবার মেলা যথা সময়ে শুরু হয় সেই চিত্র পাল্টাবে বলে আশা করছেন তারা। নবযুগ প্রকাশনী মালিক পক্ষের একজন জানালেন, ২০২১ সালের বইমেলা আমাদের সব থেকে বাজে কেটেছে। গত বছর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও বিক্রি হয়নি প্রত্যাশামতো। তবে এবার ভালো বিক্রি হবে বলে আশা করছি।
এবার বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গায়। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি ইউনিট অর্থাৎ মোট ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মেলায় ৩৮টি প্যাভিলিয়ন থাকবে।এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য- পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।
আজ বিকালে বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বইমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা।এ সময় তিনি বাংলা একাডেমি কর্তৃক নতুন বছর প্রকাশিত ৭টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করবেন। এ সময় সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ‘বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কার ২০২২’ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী।।
মন্তব্য