রাস্তায় স্বামীকে কোপাচ্ছিলেন প্রেমিক, দাঁড়িয়ে দেখছিলেন স্ত্রী

বরিশালের গৌরনদী মডেল থানার অধীন কালনা এলাকায় স্বামীকে হত্যার উদ্দেশ্যে চেতনাশক খাইয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছেন স্ত্রী ও তার প্রেমিকসহ বন্ধুরা। এ ঘটনার সাত দিনের মধ্যে স্ত্রী রাবেয়া আক্তার মুসকান, তার দুই প্রেমিক রায়হান খন্দকার ও আবু সাইদ সিয়াম এবং সিয়ামের বন্ধু জিহাদ হাসান রাজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, নিহতের স্ত্রী রাবেয়া আক্তার মুসকান, রায়হান ও সিয়ামের আদি বাড়ি গৌরনদী এবং রাজনের আদি বাড়ি জামালপুরে। তবে সিয়াম ও রাজন গাজীপুরের টঙ্গীর দত্তপাড়া এলাকায় বসবাস করেন।

নিহত ব্যক্তি গৌরনদী মডেল থানার অধীন কালনা এলাকার কবির বেপারীর ছেলে সৌরভ বেপারী।

সংবাদ সম্মেলনে জানান, গত ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় ওই এলাকায় রাস্তার ওপর সৌরভ বেপারী নামের এক যুবককে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। এই ঘটনা জানতে পেরে গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম আল বেরুনী, গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন, পরিদর্শক (তদন্ত) হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি টিম ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন ও হামলাকারীদের শনাক্তে কাজ শুরু করে। পরে তদন্তের শুরুতেই বিভিন্ন তথ্য ও সন্দেহজনক আচরণ পরিলক্ষিত হওয়ায় ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী স্ত্রী রাবেয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। এ সময় প্রথমে রাবেয়া এলোমেলো তথ্য দিলেও পরে স্বেচ্ছায় ঘটনার বিবরণ দেন।

গত ২৪ জানুয়ারি ছুটিতে সৌরভ ঢাকা থেকে গৌরনদীতে গ্রামের বাড়িতে আসেন। পরদিন দুপুরের খাবার খাওয়ার পর সৌরভকে ভিটামিন ওষুধ বলে দুটি চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ায় রাবেয়া। পরে একই দিন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কেনাকাটার জন্য সৌরভের সঙ্গে গৌরনদী উপজেলা সদরে যান রাবেয়া। ওই সময় স্বামী সৌরভের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে রাবেয়া একটি পার্লারের ভেতরে যান ও কৌশলে মোবাইল ফোনে প্রেমিক সিয়ামকে সংবাদ দেন। পরে পার্লারের কাজ শেষে ঘণ্টাখানেক পর স্বামী সৌরভ অসুস্থবোধ করলে রাবেয়া তাকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বান্ধবীর বাসায় যাওয়া কথা বলে অটোরিকশা থেকে রাবেয়া তার স্বামী সৌরভকে নিয়ে নেমে যান। গৌরনদীর কালনা এলাকার শামসুল হকের বাড়ির পূর্ব পাশের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় সৌরভকে স্ত্রী রাবেয়ার প্রেমিক সিয়াম ও রাজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুনের উদ্দেশ্যে কুপিয়ে জখম করে। এ সময় সৌরভের গলার ওপরের অংশে, ঘাড়ের নিচে, গালে, কানেসহ দুই হাত রক্তাক্ত জখম হয়। হামলার সময় স্ত্রী রাবেয়া স্বামী সৌরভকে বাঁচানোর চেষ্টা না করে নীরবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন। গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত সৌরভের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ছেড়ে পালিয়ে যান।

এ ঘটনায় নিহত সৌরভ বেপারীর বাবা গৌরনদী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। এই মামলার প্রধান আসামি রাবেয়াকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গত ২৮ জানুয়ারি আদালতে সোপর্দ করা হয়। তখন রাবেয়ার ঘটনার বিবরণ দিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) গাজীপুর মেট্রোপলিটনের টঙ্গী পূর্ব থানার দত্তপাড়া এলাকায় অভিযান চালায় পলিশ। সেখান থেকে আবু সাইদ সিয়াম ও জিহাদ হাসান রাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী হামলায় ব্যবহৃত রক্তমাখা চাপাতি ও ছোরা উদ্ধার করা হয়।

রাবেয়া জানান, ‘প্রায় সাড়ে তিনমাস আগে সৌরভ বেপারীর সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় সৌরভ বলেছিলেন, তিনি সরকারি চাকরি করে ও রাবেয়াকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দেবেন। বিয়ের পর রাবেয়া জানতে পারেন সৌরভ সরকারি চাকরি নয়, ঢাকায় একটি প্রাইভেট ব্যাংকের গাড়িচালক। এ বিষয়টি ছাড়াও বিয়ের পর মুসকানের আগের বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে সম্পর্ক ও সাংসারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সৌরভের মনোমালিন্য দেখা দেয়। এ কারণে রাবেয়া তার স্বামী সৌরভের ওপর ক্ষুব্ধ হন। পরে বিয়ের আগের প্রেমিক আবু সিয়াম ও তার বন্ধু রাজনদের সহযোগিতায় সৌরভকে হত্যার পরিকল্পনা করে’।

পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, সৌরভের স্ত্রী রাবেয়া স্বীকার করেছেন পুরো ঘটনা তার সাজানো ছিল। রাবেয়া চাননি সৌরভকে এভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে আহত করা হোক। সৌরভের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় রাবেয়া চেয়েছিলেন ভয়ভীতি দেখিয়ে তালাক নিয়ে প্রেমিক সিয়ামকে বিয়ে করতে।