ব্যবসায়িক পরিবারে বেড়ে ওঠা তার। দাদা, বাবা— সকলেই ব্যবসায় নাম উজ্জ্বল করেছেন। বড় হয়ে একই পথ বেছে নিয়েছেন তিনিও। আর তাতে সফলও হয়েছেন। তিনি হলেন নুসলি ওয়াদিয়া। ভারত তো বটেই, বিশ্বেরও অন্যতম বিত্তবান ব্যক্তি তিনি।
ভারতীয় ব্যবসায়ী নুসলির একাধিক সংস্থা রয়েছে। বিস্কুট থেকে বিমান— সব সংস্থাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। গত ২২ মার্চ বিশ্বে ধনী ব্যক্তিদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ‘এমথ্রিএম গ্লোবাল রিচ লিস্ট’ অনুযায়ী বিশ্বের অন্যতম ধনী বিস্কুট প্রস্তুতকারী সংস্থার শিরোপা পেয়েছে নুসলির সংস্থা।
যে বিস্কুট প্রস্তুতকারী সংস্থার হাত ধরে খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছেছেন নুসলি, সেই সংস্থা এক সময় অধিগ্রহণ করতে গিয়ে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল তাকে। সেই কাহিনী বলার আগে বরং নেসের অতীতটা জেনে নেওয়া যাক।
১৯৪৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মুম্বাইয়ে পার্সি ওয়াদিয়া পরিবারে জন্ম নুসলির। তার বাবা নেভিল ওয়াদিয়া এবং দাদা নেস ওয়াদিয়ারও ব্যবসায়ী হিসেবে সুনাম রয়েছে।
ব্যবসায়িক পরিবারের সন্তান হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই সেদিকেই ঝোঁক ছিল নুসলির। ওয়াদিয়াদের পোশাক প্রস্তুতকারক সংস্থা রয়েছে। ভারতজুড়ে এই সংস্থার খুবই নামডাক।
১৯৬২ সালে ওই সংস্থায় শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন নুসলি। ৮ বছর পর, ১৯৭০ সালে সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে যোগ দেন তিনি।
পরের বছর নুসলি জানতে পারেন যে, সংস্থাটি অন্য এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করবেন তার বাবা। তখন নুসলির বয়স মাত্র ২৬ বছর। নিজের কাঁধে সংস্থা চালাতে তখন মুখিয়ে ছিলেন নুসলি।
মা, বোন, বন্ধুবান্ধব এবং মেন্টর জেআরডি টাটার সাহায্যে সংস্থাটির ১১ শতাংশ শেয়ার আদায় করে নেন নুসলি। বিক্রি ঠেকাতে কর্মীদের শেয়ার কেনার আহ্বান জানান। তার পর বাবাকে বুঝিয়ে সংস্থার বিক্রি ঠেকান।
১৯৭৭ সালে সংস্থাটির চেয়ারম্যান হন নুসলি। তার পর থেকেই ব্যবসায়িক দুনিয়ায় রাজত্ব করতে শুরু করেন তিনি।
তবে প্রথম থেকেই একটি নামী বিস্কুট প্রস্তুতকারী সংস্থায় নিয়োজিত হওয়ার ইচ্ছা ছিল নুসলির। এই সূত্রেই ওই সংস্থাটি অধিগ্রহণের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
সেই সময় ওই সংস্থাটির মালিকানা ছিল আমেরিকার আরজেআর নেবিসকোর। বন্ধু রাজন পিল্লাইয়ের মাধ্যমে নেবিসকোর কর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন নুসলি।
কিন্তু বিস্কুট প্রস্তুতকারী সংস্থার ভারতীয় শাখার চেয়ারম্যান হিসেবে নুসলির বদলে পিল্লাইকে বেছে নেয় আমেরিকার ওই সংস্থা। ফলে স্বপ্নপূরণ অধরা থেকে যায় নুসলির। পরে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে পিল্লাইয়ের বিরুদ্ধে। সেই সময় ওই সংস্থাটি অধিগ্রহণ করেন নুসলি।
নুসলিদের ওয়াদিয়া গোষ্ঠীর অধীনে বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে। ২০০৫ সালে বিমান পরিবহন ব্যবসাতেও পা রাখে তারা। সেখানেও সফল হয়েছে ওয়াদিয়া গোষ্ঠী। নুসলির সম্পত্তির পরিমাণ নেহাত কম নয়! বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জানা গেছে, নুসলির মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৩৮০ কোটি মার্কিন ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩১ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা।
এ তো গেল নুসলির ব্যবসায়িক দিকের কথা। ব্যবসায়িক পরিবারের যোগ্য উত্তরসূরী তিনি ঠিকই। তবে তার আরও একটি পরিচয় রয়েছে। তিনি পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলি জিন্নাহর নাতি। সম্পর্কে জিন্নাহ নুসলির মামাত দাদু (বাপের মামা) হন। ২০০৪ সালে মা, পুত্রদের সঙ্গে পাকিস্তানে গিয়ে জিন্নাহর সমাধিস্থল ঘুরে দেখেছিলেন নুসলি।
নুসলির স্ত্রীর নাম মৌরিন ওয়াদিয়া। তিনি এক সময় বিমানসেবিকা ছিলেন। পাশাপাশি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার অন্যতম আয়োজক তিনি। নুসলির দুই পুত্র রয়েছে। তারা হলেন- নেস ও জাহাঙ্গীর ওয়াদিয়া।
সূত্র: আনন্দবাজার।
মন্তব্য