প্রবাসী আয় ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল

দীর্ঘ সাত মাস পর প্রবাসীদের পাঠানো আয় বা রেমিট্যান্স ২ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে। সদ্য সমাপ্ত মার্চ মাসে প্রবাসীরা দেশে ২০১ কোটি (২.০১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। যা গত সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সবশেষ গত বছরের আগস্টে ২০৩ কোটি (২.০৩ বিলিয়ন) ডলার প্রবাসী আয় এসেছরোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বৈশ্বিক উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ডলার সংকটের মধ্যে প্রবাসীদের আয়ও কমে যাওয়ায় গত অর্থবছর থেকেই বৈদেশিক লেনদেনে চাপে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২১-২২ অর্থবছর নেতিবাচক প্রবণতায় শেষ হয়। আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ রেমিট্যান্স কম এসেছিল। তবে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরুতেই ইতিবাচক ধারায় ফেরে রেমিট্যান্স প্রবাহ।চলতি বছরের শুরু (জানুয়ারি) থেকেই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আলো দেখাচ্ছে। প্রাবাসীদের পাঠানো এই রেমিট্যান্সে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের জন্য এটি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সদ্য সমাপ্ত মার্চ মাসে বৈধপথে ২০১ কোটি ৭৭ লাখ ডলার রে‌মিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।যা দেশীয় মুদ্রায় (প্র‌তি ডলার ১০৭ টাকা ধরে) ২১ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। আগের মাস ফেব্রুয়ারির চেয়ে ৪৫ কোটি ৭২ লাখ ডলার বেশি।ফেব্রুয়ারিতে ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের (২০২২) মার্চের তুলনায় এ বছরের একই মাসে ৮ দশ‌মিক ৪৯ শতাংশ বা ১৫ কো‌টি ৮০ লাখ ডলার বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। গত বছরের মার্চে ১৮৫ কোটি ৯৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, চল‌তি বছ‌রের জানুয়া‌রিতে রেমিট্যান্স এ‌সে‌ছিল ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার। তবে জানুয়া‌রির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স কম আসলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম (জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত) ৯ মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৬৩০ কোটি মার্কিন ডলার। তার আগের অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৫২৯ কোটি ডলার।সে হিসাবে গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেশি এসেছে ৭৪ কোটি মার্কিন ডলার।

এদিকে গত অর্থবছরে (২০২১-২০২২) দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। তার আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে আসে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম মাস জুলাইয়ে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। দ্বিতীয় মাসেও সমপরিমাণ প্রবৃদ্ধি হয়; কিন্তু কমতে শুরু করে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে। এ দুই মাসেই আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কম আসে প্রবাসী আয়। তবে নভেম্বর ও ডিসেম্বর আবার বাড়তে শুরু করে। সেই ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য, রিজার্ভ বাড়াতে রেমিট্যান্স প্রবাহের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। হুন্ডি বন্ধ করে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। হুন্ডি ঠেকাতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) নতুন কৌশলে নেমেছে। সম্প্রতি হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো রেমিট্যান্সের ২৩০ জন বেনিফিশিয়ারির অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে উত্তোলন স্থগিত করে আর্থিক খাতের গোয়েন্দা সংস্থাটি। বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিলে অ্যাকাউন্টগুলো খুলে দেওয়া হবে।