আগামী ৩১শে মে শুরু হচ্ছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন। ১লা জুন জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করা হবে। এ বছর সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকার বেশি বাজেট পেশ করা হবে বলে ইতিমধ্যেই অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এমন এক সময়ে বাজেট ঘোষণা হতে যাচ্ছে, যখন দেশে চরম মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ-ডলার সংকট, রাজস্ব আদায় কম, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত এবং বছর শেষে জাতীয় নির্বাচন। ইত্যাদি কারণে এ বছর বাজেট হবে বড় চ্যালেঞ্জিং। অর্থনীতিবিদরা ধারণা করছেন, অন্যসব বছরের তুলনায় এ বছরের বাজেট কিছুটা চ্যালেঞ্জের হবে। কারণ জাতীয় নির্বাচনের আগে সব সরকারই জনতুষ্টিমূলক বাজেট দিতে চায়। কারণ অতীতে দেখা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে যেসব বাজেট দেয়া হয়, সেখানে অর্থনীতির উন্নতির তুলনায় জনতুষ্টিকে প্রাধান্য দিয়ে বাজেট ঘোষণা করার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। তবে এবার আর্থিক অবস্থা ও রাজস্ব ঘাটতির কারণে সে সুযোগ খুব সীমিত। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্তগুলো বাস্তবায়নেরও চাপ থাকবে। এ বছরের বাজেটে আইএমএফ’র শর্তগুলো অনেকটা ‘ছায়া’ আকারে থাকবে। আইএমএফ’র ঋণ অব্যাহত রাখতে যতটা সম্ভব তাদের শর্তগুলোও অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা থাকবে। এজন্য ভারসাম্য রেখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আদায় ও অন্যসব বিবেচনায় নিয়ে বাজেট পেশ করতে হবে। সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে এবারই সামষ্টিক অর্থনীতি সবচেয়ে বেশি কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং আইএমএফ’র শর্ত এবং জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে সার্বিকভাবে সংস্কার প্রয়োজন। এই সংস্কার যেন সুচিন্তিত এবং স্বচ্ছ হয়। খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য আইনের প্রয়োগ করতে হবে। এ ছাড়া পাচার করা টাকা দেশে আনার সুযোগ বাতিল করতে হবে। আইএমএফ’র শর্ত অনুযায়ী কর ছাড় কমাতে হবে। চলতি অর্থবছরের এনবিআর’র শুল্ক-কর আদায়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হতে পারে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। সার্বিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তিনি। তাই আগামী বাজেট চ্যালেঞ্জের হবে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাই আগামী বাজেটের প্রধান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, আগের নির্বাচনী বছরগুলোতে অর্থনীতি তেমন একটা সংকটের মধ্যে ছিল না। ফলে সেই সময় বড় ধরনের কোনো চাপ তৈরি হয়নি। কিন্তু এবার নির্বাচনকে সামনে রেখে জনতুষ্টির কথা বিবেচনা করে বাজেট করা হলে অর্থনীতির ওপর নতুন চাপ তৈরি করবে বলে মনে করেন তিনি। এই ক্ষেত্রে একটা ভারসাম্য রাখতে হবে। সে করণে অতিরিক্ত খরচ এড়িয়ে চলা। প্রয়োজন নেই এমন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ না করা। তবে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে জনতুষ্টিমূলক বাজেট দেয়ার সুযোগ খুবই সীমিত।
মন্তব্য