ডলার ক্রাইসিসের ছায়া আরও দীর্ঘ হচ্ছে

দেশে দীর্ঘদিন ধরেই ডলারের সংকট চলছে। মাঝে সামান্য কিছুটা স্থিতিশীল হলেও বর্তমানে ডলারের সংকট চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। ডলার রক্ষায় আমদানিতে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) বা ঋণপত্র খুলতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি রিজার্ভের পরিমাণ বাড়াতে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রিও কমিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু তাতেও সংকট সামাল দেয়া যাচ্ছে না। এতে বিপদে পড়েছেন আমদানিকারকরা। এরমধ্যে বেশি ক্রাইসিসে পড়েছসবমিলিয়ে চলমান ডলার সংকটের কারণে কয়েকটি খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে দেশের প্রধান শিল্প ও উৎপাদন খাতকে। খুব সহসাই এসব সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। অর্থ সংকট ও বিদেশ থেকে জ্বালানি আনতে না পারায় যেকোনো সময় সংকট আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।সূত্র জানায়, সম্প্রতি এ পরিস্থিতির সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো দেশের সবচেয়ে বড় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। ডলার সংকটের কারণে কয়লার বকেয়া বিল পরিশোধ করতে না পারায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। ফলে তীব্র গরমে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে দেশ। এতে নতুন করে আবার ডলার সংকটের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। কারণ ডলার সংকটে গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি আমদানি করতে পারছে না সরকার। ফলে বিদ্যুৎ-জ্বালানি উৎপাঅন্যদিকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে বাংলাদেশি কোম্পানির বকেয়া দিন দিন বাড়ছে। পাশাপাশি বিদেশি এয়ারলাইন্সের আয় স্থানান্তর, ব্যক্তিগত ভ্রমণ, এমনকি বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য টিউশন ফি পরিশোধে নানা সংকটে পড়তে হচ্ছে। বিদেশি এয়ারলাইন্সের ২১ কোটি ৪০ লাখ ডলার সমপরিমাণ আয় আটকে আছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হলেও ব্যাংক থেকে ডলার না পাওয়ায় তারা আয় নিতে পবাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসের তুলনায় মে মাসে এলসি বেশি খোলা হলেও চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৫৬.৩৬ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এ পরিমাণ প্রায় ২৭ শতাংশ কম। ডলার সংকটের কারণে বিলাসী পণ্যের পাশাপাশি অনেক জরুরি পণ্যের আমদানিও কমেছে। জরুরি পণ্যের মধ্যে অন্যতম হলো মেডিকেল ডিভাইস ও জীবনরক্ষাকারী ওষুধ। এসব পণ্য আমদানির এলসি খোলা থেকে দীর্ঘ সময় ধরে বিরত থাকছে। শতভাগ চাহিদার বিপরীতে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ এলসি খোলা যাচ্ছে। আমদানি কমায় কোম্পানিগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী কাঁচামালের ব্যাপক সংকট দেখা গেছে। বাজারে ওষুধের সরবরাহ কমেছে শতকরা জানা গেছে, ডলার সংকটে আটকা পড়েছে ফার্নেস অয়েল আমদানি। ঋণপত্র খুলতে পারছে না বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো (আইপিপি)। একই অবস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনেরও (বিপিসি)। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চাহিদা অনুযায়ী ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে পারছে না। এতে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন।

ডলার সংকটে বিল বকেয়া থাকায় কয়লা সরবরাহ না হওয়ায় গত সোমবার বন্ধ হয়ে গেছে পটুয়াখালীর ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর প্রভাব পড়েছে পুরো দেশে।