ব্যর্থতা ঢাকতে শায়েস্তাগঞ্জের ওসির কাণ্ডে সমালোচনার ঝড়

ব্যাটারি চুরির অভিযোগে আটক তিনজনকে ‘চেতনানাশক ছিটিয়ে চুরি’র মামলায় আদালতে সোপর্দের অভিযোগ উঠেছে শায়েস্তাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ নাজমুল হক কামালের বিরুদ্ধে।

লোকদের অজ্ঞান করে একের পর এক চুরির ঘটনায় শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলাবাসী অতিষ্ঠ হলেও অপরাধীদের দমন করতে পারেনি পুলিশ। এজন্য ওসি তার ব্যর্থতা ঢাকতে এই বেআইনী কাজ করেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিয়েছেন জনপ্রতিনিধিসহ সচেতন মহল। তবে ওসির দাবি জনতার এ অভিযোগ অযৌক্তিক।

শায়েস্তাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বুলবুল খান তার ফেসবুক পেজে ওসির সমালোচনা করে একটি পোস্ট দেন। ১৯টি শেয়ার, ২৯টি মন্তব্য এবং ২০৯টি প্রতিক্রিয়া আসে এতে।

গ্রেপ্তার তিন যুবক হলেন, শায়েস্তাগঞ্জের লাদিয়ার এলাকার সুমন মিয়া, শাহীন মিয়া ও জামাল মিয়া।

বুলবুল খান তার স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন, ওই তিন যুবক ইজিবাইকের ব্যাটারি চুরি করলে স্থানীয় লোকজন তাদের আটক করে থানায় সোপর্দ করেছিলেন। কিন্তু ওসি তার ব্যর্থতা আড়াল করতে তাদের ‘চেতনানাশক ছিটিয়ে চুরি’র মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করেছেন।

তিনি আরও লেখেন, অনেক বাসায় চেতনানাশক ছিটিয়ে লোকদের অজ্ঞান করে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে উপজেলাবাসী অতিষ্ঠ। অপরাধ দমনে ওসি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। সেই ব্যর্থতা ঢাকতেই তিনি ব্যাটারি চোরদের চেতনানাশক ইস্যুতে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করলেন।

মন্তব্যে তালুকদার রিহাদ লিখেন, এরকম ওসিকে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় দেখতে চাই না।

ওসির এ সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে কমেন্ট করেছেন আরও ২৯ জন। তারা ওসিকে অপসারণের দাবি জানান উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় দেড় মাস আগে চেতনানাশক ছিটিয়ে চুরির প্রথম ঘটনা ঘটে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সাবাশপুর গ্রামের আবদাল মিয়ার বাড়িতে। ভোরবেলা গ্রামবাসী দেখতে পান বাড়ির সবাই অজ্ঞান এবং ঘরে রক্ষিত মূল্যবান জিনিসপত্র সেখানে নেই।

স্থানীয়রা জানান, সেদিনের ঘটনার পর গত বুধবার পর্যন্ত তিনজন পুলিশ সদস্যসহ আরও অন্তত ১২টি বাড়িতে একইভাবে চুরি হয়। এছাড়া বেশ কয়েকটি পরিবারকে অজ্ঞান করতে পারলেও আশপাশের লোকজন সতর্ক থাকায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় অপরাধীরা। এসব ঘটনায় কয়েকজন শিশুসহ ১৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এঘটনায় স্থানীয় লোকজন এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। একই ঘটনায় তালেব আলী নামে আরেকজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে র‌্যাব।

তবে পুলিশের পক্ষ থেকে তেমন কোন তৎপরতা না দেখার অভিযোগ তুলেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, ওসি নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে অন্য অভিযোগে আটক তিনজনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখালেন।

তবে অভিযোগটি অযৌক্তিক দাবি করেছেন ওসি নাজমুল হক কামাল। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার ওই তিন যুবক ও ‘স্প্রে পার্টির’ সদস্য বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। এজন্য মাসখানে আগে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হিরক চক্রবর্তীর দায়ের করা চেতনানাশক ছিটিয়ে চুরির মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।