আইএমএফ ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের প্রস্তাব অনুমোদন

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের অনুকূলে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি বাবদ ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। শিগগিরই এ অর্থ আইএমএফ থেকে ছাড় করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়াশিংটনের হিসাবে স্থানান্তর করা হবে। আইএমএফের দুটি মৌলিক শর্ত বাস্তবায়ন না করেই বাংলাদেশ ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের অনুমোদন পেল। এ অর্থ ছাড় হলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা বাড়বে। এতে ডলারের সংকট কিছুটা হলেও উপশম হবে। পাশাপাশি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও বিশ্বব্যাংক থেকেও আরও দুটি ঋণের অর্থ এ মাসের শেষদিকে পাওয়ারআইএমএফের বোর্ড মিটিংয়ে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি অনুমোদন হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। দ্বিতীয় কিস্তিতে বাংলাদেশ ৬৮ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার ঋণ পাবে। রাত সাড়ে ১২টায় অর্থ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য

বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার রাত ৯টায় আইএমএফের সদর দপ্তর ওয়াশিংটনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভায় শ্রীলংকার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করার প্রস্তাবও উঠেছে। সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের অনুকূলে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাবে অনুমোদন দেয় আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদ। সাত কিস্তিতে ছয় মাস পরপর প্রতি কিস্তি ছাড়ের শর্তে এ ঋণ পাওয়ার কথা রয়েছে। অর্থাৎ অনুমোদনের পর থেকে ৪২ মাসে সমুদয় কিস্তির অর্থ পাওয়া যাবে। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে ঋণের শেষ কিস্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। শর্ত হলো- প্রতি কিস্তি ছাড়ের আগে ঋণের শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতির বিষয়টি পর্যালোচনা করে ঋণ ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেবে। ঋণের গড় সুদের হার ২ দশমিক ২ শতাংশ। 

ঋণের প্রথম কিস্তি বাবদ ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার চলতি বছরের গত ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফের কাছ থেকে পেয়েছে বাংলাদেশ। এবার পাচ্ছে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি। দ্বিতীয় দফায় আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি দেখতে গত অক্টোবরের শুরুর দিকে একটি মিশন ঢাকায় এসেছিল। তারা দুই সপ্তাহ ঢাকায় অবস্থান করে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে অর্থনীতির একটি মূল্যায়ন করে গেছে। ওই সময়ে কিছু শর্ত বাস্তবায়নে বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে সময় চেয়েছে। এর আলোকে আইএমএফ একটি প্রতিবেদন তৈরি করে তা নির্বাহী পর্ষদের কাছে উপস্থাপন করে। এর আলোকে পর্ষদ ঋণ ছাড় করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। 

সূত্র জানায়, আইএমএফের দুটি মৌলিক শর্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এগুলো হলো গত জুনের শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ন্যূনতম ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার রাখা। ওই সময়ে রিজার্ভ এর চেয়ে কিছুটা কম ছিল। বিশেষ করে জ্বালানি, সার ও খাদ্যপণ্য আমদানির জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার খরচ করতে হয়েছিল বলে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রিজার্ভ প্রায় ৩০০ কোটি ডলার কম ছিল। 

এছাড়া ন্যূনতম রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয়নি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারের কমপক্ষে তিন লাখ ৪৫ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের শর্ত দিয়েছিল। বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে দেশের অর্থনীতিতেও মন্দা দেখা দেওয়ায় সেটি সম্ভব হয়নি। এদিকে আইএমএফের শর্তে গত জুনের মধ্যে কর জিডিপির অনুপাত দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এছাড়া অন্য অনেক শর্ত পূরণ করেছে। 

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ২০২২ সালের শুরু থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশের আমদানি ব্যয়ও লাগামহীনভাবে বেড়ে যায়। এতে ডলার সংকট দেখা দেয়। ক্রমেই তা প্রকট হয়ে ওঠে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও টান পড়ে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে আগাম সতর্কতা হিসাবে বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে ঋণ সহায়তা চায়। আইএমএফ দেশের অর্থনীতির সার্বিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঋণ দিতে সম্মত হয়। 

আইএমএফের ঋণকে বলা হয় ‘বহুমুখী ঋণের জানালা’ বা ‘মাল্টিলেটারাল ক্রেডিট উইন্ডো’। আইএমএফ দেশের অর্থনীতির চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ঝুঁকি নিরূপণ করে। এসব ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য নানা ধরনের শর্ত আরোপ করে। ওইসব শর্ত মানলেই কেবল ঋণ দেওয়া হয়। এ কারণে আইএমএফের ঋণ পাওয়া মানেই হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কম। এ কারণে আইএমএফ কোনো দেশকে ঋণ দিলে অন্য সংস্থাগুলোও ওই দেশকে ঋণ দিতে আগ্রহ দেখায়। আইএমএফের ঋণ পাওয়ার পর বিশ্বব্যাংক থেকে পেয়েছে ৫০ কোটি ডলার। এডিবি ও অন্যান্য সংস্থা থেকেও ঋণ পেতে যাচ্ছে।