আমি ছোট জায়গার মেয়ে, জলপাইগুড়ির। এমন এক জায়গা যেখানে মানুষ স্বপ্ন দেখতো না। ওখানকার মানুষ জীবনকে অন্যভাবে বোঝে। দশটা-পাঁচটার চাকরি, পাড়ার আড্ডা, ভাতঘুম এর মধ্যে জীবন ঘুরতে থাকে। সেখানে আমার ছোট থেকেই দম বন্ধ হয়ে আসতো। আমি সে সময় ড্রাইং করি, কাবাডি খেলি, ব্যাডমিন্টনে পুরস্কার পাই। হাফ প্যান্ট পরে বাড়িতে থাকি। বাড়িতে মাকে অনেকেই এসে বলে যায় এভাবে ‘মেয়ে’ তৈরি হলে তার বিয়ে হবে না। বাবা-মা বিপদে পড়বে। এভাবেই সম্প্রতি কথাগুলো বলছিলেন কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত নারী হয়ে জীবন পার করার যে প্রতিবন্ধকতা তাই তিনি শেয়ার করেছেন এক সাক্ষাৎকারে। মিমি বলেন, মেয়েদের ক্ষেত্রে আসলে কিছুই সহজ নয়। ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম কাজ ধারাবাহিকে। নাম ‘চ্যাম্পিয়ন’। আমার মতো অনেক নতুন মুখ। মনে আছে তখন একটাই সাজঘরে আমরা সাজছি। হঠাৎ তিনজন প্রতিষ্ঠিত পুরুষ অভিনেতা ওই ঘরে ঢুকে ধুম করে আমাদের মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে বলেছিলেন, ছেলেমেয়েরা বেরিয়ে যাক তার পরে আমরা ঢুকবো। আমরা সাজগোজ করা অবস্থায় বাইরে বেরিয়ে গাছের তলায় বসে রইলাম। আজ বোধ হয় অভিনেত্রীদের এত বিরূপতা সহ্য করতে হয় না। এখন সকলের ম্যানেজার থাকে। বাউন্সার থাকে। আমি ইন্ডাস্ট্রিতে আসার পরে লোকে বলেছিল, গ্রামের মেয়ে। কোনো দিন অভিনয় হবে না। আজ সেই মুখগুলো দেখি না। তবে আজকের দিনে দাঁড়িয়েও নারী শিল্পী হিসেবে ইন্ডাস্ট্রিতে আমরা পিছিয়ে। এই কথা গলা তুলে বলতে চাই। আজ যদি ইন্ডাস্ট্রির সব মহিলা শিল্পী একজোট হয়ে লিঙ্গ বিশেষে পারিশ্রমিকের বিভাজন নিয়ে সোচ্চার হতো, তাহলে মেয়েদের কম পারিশ্রমিক দেয়ার বিষয়টা হয়তো বন্ধ হতো। এখানে লোকে বোঝেই না, এক হলে কাজ সহজ হয়। এই ইন্ডাস্ট্রিতে ভিন্ন স্বর থাকা ‘মেয়েদের’ কেউ পছন্দও করে না। কেন আমি চিত্রনাট্য নিয়ে এত প্রশ্ন করবো? কেন? শুনতে হয়। বলিউডে কিন্তু এমন হয় না। টলিউডে টাকা কম জানি। তাই বলে নিশ্চয়ই দু’লাখ টাকায় কাজ করবো না। সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আমি আজকের মিমি।
মন্তব্য