ধর্মপাশায় ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে অনিয়মের অভিযোগ 

মো ইসহাক মিয়া (ধর্মপাশা) প্রতিনিধি :  সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার হাওরে সীমাহীন অনিয়মের মাধ্যমে করা হচ্ছে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ। সময়সীমার আর মাত্র ৭ দিন বাকি। এখনও অনেক বাঁধের অর্ধেক কাজও করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট পিআইসিরা। হাওরে হাওরে চলছে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা। হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধ যেন লুটপাটের এক নতুন ক্ষেত্র। দায়সারা ভাবে কাজ করে প্রকল্পের বরাদ্ধের টাকা লুটপাটের জন্য ব্যাস্ত হয়ে উঠেছে পিআইসিরা। অধিকাংশ হাওর বাঁধের ক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসনের চোখের সামনেই চলছে হাওর বাঁধ মেরামতে পিআইসিদের নীতিমালা লঙ্ঘন ও সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি।উপজেলা প্রশাসন ইউএনও ও এসিল্যান্ড বাঁধ মেরামতের কাজে দুর্নীতি রোধে কঠোরপদক্ষেপ গ্রহন করে আসলেও দায়িত্ব পালনে উদাসীন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলীগণ।বাঁধ মেরামতে অনিয়মের বিষয় জানানোর চেষ্টা করা হলে কর্ণপাত না করে উল্টো পিআইসিদের পক্ষ নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন উপসহকারী প্রকৌশলী ও উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মাহমুদুল ইসলাম । তবে বাঁধে দূর্মুজ ব্যাবহার করা হয়নি সত্যতা স্বীকার করে বলেন,সকল বাঁধে দুর্মুজব্যাবহার করা হচ্ছে না তা সঠিক নয়। যে সকল বাঁধে দূর্মুজ ব্যাবহার করছেনা, তা জানানোর জন্য বলেন তিনি। সম্প্রতি কাইলানী হাওরের ৫১ নম্বব প্রকল্পের টঙ্গীর বাঁধটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ।এ বাঁধ ভেঙ্গে গেলে ধর্মপাশা উপজেলার গুরমার হাওর ও পাশের কয়েকটি হাওরের বোরো ফসলসহ পাশের নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা ও দূর্গাপুর উপজেলার হাজার হাজার একর জমির বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে বিনষ্ট হয়।এ টঙ্গীর বাঁধে প্রতিবেদকের দেখা হয় উপসহকারী প্রকৌশলী (এস ও)আনম গোলাম সারওয়ারের সঙ্গে। (এস,ও)কে সামনে রেখে বাঁধের কাজে নিয়োজিত শ্রমিক দূর্মুজ ব্যাবহার না করে কোদাল দিয়ে বাঁধের উপরের মাটি সমান করতে দেখা যায়।উপস্থিত থাকা এসও কে বিষয়টি দৃষ্টিগোচর করিয়ে দেওয়া হলে শ্রমিকদের দূর্মুজ মারার কাজে লাগান তিনি। এ রকম উদাসীনতা ও কর্তব্যে অবহেলার কারণেই দায়সারা ভাবে কাজ করছে পিআইসিরা। ফলে বাস্তবে প্রশাসনিক কঠোরতার কোন সাফল্য দেখা যাচ্ছে না। অধিকাংশ প্রকল্পে বাঁধের একেবারে কাছে থেকে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। এর আগেও এরকম অনিয়ম হয়েছে এসব প্রকল্পে। এভাবে বছরে বছরে একই স্থানে বাঁধের একেবারে গোড়া থেকে মাটি উত্তোলন করার কারণে বাঁধের পাশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। মেজারমেন্ট অনুযায়ী ও নীতিমালা অনুযায়ী কাজ না করে উপজেলার সবক'টি বাঁধের মেরামত কাজে নীতিমালা লঙ্ঘন ও সীমাহীন অনিয়ম চলছে। বাঁধের অতি কাছে থেকে মাটি উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না, দুর্মুজ ব্যাবহার হচ্ছে না মোটেও । বাঁধের কাজে অনিয়মের কারণে ও কাজ সময়মত আদায় করার জন্য বেশ কিছু পিআইসি সভাপতিকে শোকজ করেছন ও দন্ড দিয়েছেন প্রশাসন। কিন্তু এ সকল সতর্ক বার্তাকে পরোয়া করছেনা পিআইসিরা। কাবিটা-২০১৭ কর্মসূচির নীতিমালা অনুযায়ী হাওর বাঁধ নির্মাণের ধারে কাছেও থাকছে না পিআইসিরা। ২০১৮-২০১৯ চলতি অর্থবছরে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ধর্মপাশা উপজেলার হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ মেরামত কাজের জন্য ৮৭ টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সরেজমিনে উপজেলার হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধে গিয়ে দেখা গেছে, অধিক বাঁধেই এস্কেভেটর মেশিনের ড্রাইভারকে ছাড়া পিআইসি’র কোন সদস্যকে উপস্থিত দেখা যায়নি। বাঁধের কাজ সম্পন্য করার ব্যাপারে চুুুুক্তিবদ্ধ হয়ে এস্কেভেটর মেশিনের ঠিকাদারকে দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছে কিছু সংখ্যক পিআইসি। এসব বাঁধগুলোতে নিয়মের মধ্যে কাজ করার কোন সুযোগই থাকছেনা।বাঁধের পাশে মেশিন বসিয়ে কাছে থেকে মাটি উত্তোলন করে স্তুপাকারে মাটি ফেলে ড্রাইভারের ইচ্ছেমত কাজ হচ্ছে। দুর্মুজ মারা,প্রকল্পস্থানে দূর্বা, ঘাস পরিস্কার করা,বালিমাটি বা এটেল মাটি দিয়ে কাজ হচ্ছে কি না তা দেখার কোন সুযোগ থাকছেনা পিআইসিদের। এস্কেভেটর দিয়ে কম সময়ে কম খরচে বাঁধের কাজ সেরে ফেলার জন্য পিআইসিরা এই পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন বলে কৃষকরা জানান।কাইলানি হাওরের ৫২ নম্বর পিআইসি সভাপতি মো. মোস্তফা।এ প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে ১৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। এ প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজের জন্য ১১লাখ টাকায় এক্সেভেটর মেশিনের ঠিকাদারকে চুক্তিতে দেওয়া হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্যসুত্রে জানা গেছে। গুরমার হাওরের ৬৫ নম্বর প্রকল্পের কাজে ১৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। পিআইসি সভাপতি মো.হাবিবুর রহমান তিনি নিজেই জানিয়েছেন এস্কেভেটর মেশিনের ঠিকাদারকে প্রকল্পের মাটির কাজ ১৪ লাখ টাকায় চুক্তিতে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে (এস ও)মাহমুদুল ইসলাম অবগত আছেন বলে জানান তিনি। আরো কম টাকায় এ বাঁধের মাটির কাজ চুক্তিতে দেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় কৃষকদের নিকট জানা যায়। এমনিভাবে কাজ কম করে বরাদ্দের টাকা লুটপাটের উদ্যেশ্যে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন পিআইসিরা। এসব অনিয়মের বিষয়ে  উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ ওবায়দুর রহমান বলেন, প্রতিটি বাঁধে যাব। বাঁধের কাজে অনিয়ম হলে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্য না হলেও ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ডিভিশন(১) আবুবকর সিদ্দিক ভুঁইয়া এর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিব করেননি ।