নামেই শুধু আধুনিক হবিগঞ্জ হাসপাতাল!

হবিগঞ্জ প্রতিবেদক: চোখের সামনে আটতলা অট্টালিকা। সাদা ঝকঝকে ২৫০ শয্যার নতুন এই ভবনটি বাইরে থেকে দেখলে যে কেউ মনে করবে হবিগঞ্জ আধুনিক হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম অনেক এগিয়ে গেছে। কিন্তু ভেতরে গেলেই হতাশ হতে হয়। নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক, যন্ত্রপাতিও অপ্রতুল। ইন্টার্নি চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন সাধারণ রোগীদের। একটু জটিল হলেই পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে ঢাকা অথবা সিলেটে। বুধবার সকালে সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জোড়াতালি দিয়ে চলছে কার্যক্রম। বহির্বিভাগের কোনো কাউন্টারেই পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসক নেই। ইন্টার্নি চিকিৎসকরা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। ২য় তলায় কনসালটেন্টের কক্ষগুলোও ডাক্তারশূন্য। রেডিওলজি বিভাগে চিকিৎসক থাকলেও এক্স-রে মেশিন নষ্ট। নেই আল্ট্রাসনোগ্রামসহ কোনো সরঞ্জাম। হাসপাতালে প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগী এলেও কোনো পস্নাটিলেট কাউন্টার মেশিন নেই। ৬ ওয়ার্ডের অনেকগুলোতেই রাউন্ডে যাননি কোনো চিকিৎসক। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রথীন্দ্র চন্দ্র দেব নিজেই সার্জারি ওয়ার্ডে রাউন্ড দেন। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. দেবাশীষ দাস সারারাত জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালনের পর সকালে হাসপাতালের ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে যান। আর ব্যস্ত হয়ে পড়েন ময়নাতদন্ত আর মেডিকেল সার্টিফিকেটের কাজে। হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালে প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৪ থেকে ৫০০ রোগী আসেন চিকিৎসা নিতে। জরুরি বিভাগেও আসেন প্রায় পাঁচশ'র বেশি রোগী। রয়েছে ৬টি ওয়ার্ড এবং ৮টি বিভাগ। প্রতিদিনই এখানে ময়না তদন্তের জন্য একাধিক লাশ আসে। মামলার কারণে মেডিকেল সার্টিফিকেট এবং ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের চাপও অনেক। মাসে ১৫০ জনের মতো ধর্ষণের ভিকটিম আসে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য। এসব কাজ করার জন্য হাসপাতালে চিকিৎসক থাকার কথা ৫৬ জনের। কিন্তু আছেন মাত্র ৮ জন। তত্ত্বাবধায়ক এবং আবাসিক চিকিৎসককে সামলাতে হয় প্রশাসনিক কাজ। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অধিকাংশ পদ খালি। একজন শিশু এবং একজন গাইনি বিশেষজ্ঞকে সামলাতে হচ্ছে বিপুল পরিমাণ চাপ। গুরুত্বপূর্ণ সার্জারি ওয়ার্ডে একমাস ধরে আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসাও বন্ধ। এরই মধ্যে ডা. নাছরিন আক্তার নামে এক চিকিৎসকের সোমবার বদলির আদেশ হয়। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. দেবাশীষ দাস জানান, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কোনো চিকিৎসক নেই। সব জায়গায় চিকিৎসক সংকট। ফলে তাকে জরুরি বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। তত্ত্বাবধায়কও নিজে কাজ করেন। এখান থেকে ১০ মাসে ৮ থেকে ১০ জন চিকিৎসক বদলি হলেও নতুন কোনো চিকিৎসক আসেননি। যারা আছেন তাদের মাঝে কেউ সমস্যায় পড়লে বা ছুটিতে গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে পড়ে। রেডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক ডা. পরেশ দাশ জানান, হাসপাতালের নাম আধুনিক হাসপাতাল হলেও বাস্তবে আধুনিকের 'আ'ও নেই। এক্স-রে মেশিন নষ্ট। অন্য যন্ত্রপাতি নেই বললেই চলে। শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কায়সার রহমান বলেন, একদিনে তিনশ' রোগী দেখতে হয়। এত রোগী দেখলে ঠিকমত প্রেসক্রিপশন লেখাও কঠিন। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রথীন্দ্র চন্দ্র দেব জানান, গত বছর স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতাল ভবনের উদ্বোধন করলেও জনবলসহ অন্যান্য বিষয় এখনও অনুমোদন হয়নি। হবিগঞ্জসহ কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের ভাটি এলাকার প্রায় ৩০ লাখ মানুষ এই হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্য সেবা নেন। হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চারশ' রোগী ভর্তি হয়। এখানে ৫৬ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও তিনিসহ আছেন ৮ জন। এর মধ্যে একজন বদলি হয়ে গেছেন।