একাধিক নারীতে আসক্ত ছিলেন চিকিৎসকের ঘাতক স্বামী রেজাউল

ফেসবুকে পরিচয়। তারপর সখ্যতা থেকে প্রেমের সম্পর্ক। ২০২০ সালের অক্টোবরে পরিবারের অজান্তে ও অমতে বিয়ে। বিয়ের আগে থেকেই স্বামী রেজাউলের একাধিক নারীর সঙ্গে সস্পর্ক। অবৈধ এসব সম্পর্কের কথা জেনে যান নারী চিকিৎসক স্ত্রী জান্নাতুল নাঈম। এসব নিয়েই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য ও বাকবিতন্ডা হয়। কিন্তু সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা স্বামী রেজাউল ওই পথ থেকে সরে আসতে পারেননি। তাইতো স্ত্রীকে পথের কাঁটা ভেবে সরিয়ে দিতে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন রেজাউল। হত্যার জন্য বেশ ক’দিন ধরেই ব্যাগে ধারালো অস্ত্র বহন করছিল রেজাউল। আজ ১২ই আগস্ট ঘটা করে জান্নাতুল নাঈমের জন্মদিন পালনের কথা বলে গত ১০ই আগস্ট পান্থপথের ‘ফ্যামিলি অ্যাপার্টমেন্ট’ নামে একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যান। সেখানে কথা কাটাকাটি, বাকবিতন্ডা ও ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত ও গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এরপর গোসল করে স্ত্রীর মোবাইল ফোন দরজার বাইরে থেকে বন্ধ করে চট্টগ্রামে যায় রেজাউল। রাজধানীর পান্থপথের একটি আবাসিক হোটেল থেকে গলাকাটা অবস্থায় নারী চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী রেজাউল করিম ওরফে রেজাকে চট্টগ্রামের মুরাদপুরের একটি ছাত্রাবাস থেকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজধানীর পান্থপথে অবস্থিত ফ্যামিলি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট নামক আবাসিক হোটেল থেকে নারী চিকিৎসকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সুরতহাল প্রতিবেদন অনুযায়ী, শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ও জখমের চিহ্ন ছিল। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের পিতা বাদী হয়ে রাজধানীর কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। র‌্যাব হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। গত রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব- ২ এবং র‌্যাব-৭ এর যৌথ অভিযানে চট্টগ্রাম মুরাদপুর এলাকা আসামী রেজাউল করিম রেজা (৩১)কে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকালে উদ্ধার করা হয় হত্যাকা-ের সময় রেজার পরিহিত রক্তমাখা গেঞ্জি, মোবাইল ও ব্যবহৃত ব্যাগ এবং ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার রেজা হত্যায় নিজের সংশ্লিষ্টতার দায় স্বীকার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তার রেজাউল ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করে। এমবিএ চলাকালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরমধ্যে তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে ২০২২ সালে জুন মাসে সে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে যোগদান করেন। নিহত নারীর সঙ্গে পরিচয় প্রেম ও হত্যা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে আসামী রেজা র‌্যাবকে জানায়, ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকার সঙ্গে পরিচয়। এরপর প্রেমের সম্পর্ক। ২০২০ সালে অক্টোবরে বিয়ে করেন তারা। পরিবারের অগোচরে বিয়ে হওয়ায় তারা স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অবস্থান করতেন। বিবাহিত সম্পর্কের মধ্যেও গ্রেপ্তার রেজার একাধিক নারীর সঙ্গে প্রেম সম্পর্ক চালিয়ে আসছিলেন। তা স্ত্রী জেনে যাওয়ায় মনোমালিন্য ও বাকবিত-া শুরু হয়। বৈবাহিক সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে জান্নাতুল নাঈম স্বামী রেজাকে কাউন্সেলিং ও আলাপচারিতার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। বিভিন্ন সময় বাকবিতন্ডার মধ্যে স্ত্রীকে প্রতিবন্ধক ভাবতে শুরু করেন। স্ত্রীকে চিরজীবনের জন্য সরিয়ে দিতে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন রেজা। পরিকল্পনা অনুযায়ী বেশ ক’দিন ধরেই স্ত্রীকে হত্যার জন্য কাঁধের ব্যাগে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঘুরছিলেন রেজা। গত ১০ই আগস্ট চিকিৎসক স্ত্রী জান্নাতুল নাঈমের জন্মদিন উদযাপনের কথা বলে পান্থপথের ‘ফ্যামিলি অ্যাপার্টমেন্টে’ নামে একটি আবাসিক হোটেল নিয়ে যান। ঐ অ্যাপার্টমেন্টে অবস্থানকালে বিভিন্ন নারীর সাথে সম্পর্ক নিয়ে কথা কাটাকাটি, বাকবিতন্ডা ও ধস্তাধস্তি হয়। এসময় রেজা তার ব্যাগ থেকে ধারালো ছুরি বের করে ভিকটিমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ও গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এরপর রক্তমাখা কাপড় পরিবর্তন করে গোসল করে মোবাইল ফোনও সঙ্গে হোটেলের দরজার বাইরে থেকে তিনি রুমের তালা বন্ধ করে বেরিয়ে যান।জিজ্ঞাসাবাদে রেজা আরও জানান, হোটেল থেকে বেরিয়ে প্রথমে মালিবাগে তার বাসায় যান। বাসা থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বের হয়ে একটি হাসপাতালে গিয়ে তার নিজের হাতের ক্ষত স্থান সেলাই করে এবং প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। পরে আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসযোগে চট্টগ্রামে গিয়ে মুরাদপুরে আত্মগোপন করেন। তিনি কিভাবে এই হত্যাকান্ড থেকে বাঁচতে পারেন সেজন্য একজন আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগও করেন রেজা। এরমধ্যেই র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হন রেজা। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।