‘সেই কৃষকদের ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত মামলা চলবে’

ঋণ পরিশোধ করেও জেলে গিয়েছিলেন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ভাড়ইমারি গ্রামের সেই কৃষকদের এমন দাবি মিথ্যা। ব্যাংক কর্মকর্তাদের অনিয়মের প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে ঋণের টাকা সম্পূর্ণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত মামলা চলবে।

দেশব্যাপী আলোচিত ঋণ খেলাপির মামলায় ১২ কৃষককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কমিটির প্রধান সমবায় ব্যাংকের ডিজিএম আহসানুল গনি।

এর আগে বুধবার ঋণ গ্রহীতা কৃষকদের দায়ী করে তদন্ত প্রতিবেদন ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপকের কাছে জমা দেওয়া হয়।

আহসানুল গনি বলেন, কৃষকরা নির্দোষ হলে তো মামলাই হতো না। উনারা সময়মতো টাকা পরিশোধ না করাতেই মামলা হয়েছিল এবং তারা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ঋণ পরিশোধ করেও জেলে গেছেন—কৃষকদের এমন অভিযোগ সত্য নয়। এই ঘটনায় ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর গাফিলতি আছে কি না, সেটা জানার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো দোষ পাইনি। উনারা (কৃষকরা) বলছেন, তারা সমিতির সভাপতির কাছে টাকা পরিশোধ করেছেন, কিন্তু কোনো রসিদ দেখাতে পারেননি। হয়তো উনাদের সমিতির সভাপতি বা সেক্রেটারির গাফিলতি থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত নয়।

মামলা পরবর্তী পদক্ষেপ কেমন হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলা তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কৃষকরা অথবা অন্য কেউ যদি টাকা পরিশোধ করেন তাহলে মামলা প্রত্যাহার হবে, না হলে মামলা চলবে।

তদন্ত কমিটির এই প্রধান বলেন, ভাড়ইমারি উত্তরপাড়া সবজি চাষি সমবায় সমিতির ৪০ জন কৃষককে ২০১৬ সালে ১৬ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এক একজন কৃষক ঋণ পান ৪০ হাজার টাকা। নির্ধারিত সময় ঋণ ও সুদের টাকা পরিশোধ না করায় সমিতির ৩৭ জন কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন অভিযুক্ত কৃষকরা। সমিতির সভানেত্রী বিলকিস আক্তার বলেন, আমরা ১৬ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ১৩ লাখ টাকা শোধ করেছি। কিন্তু উনাদের (ব্যাংক কর্তৃপক্ষ) কাছে নাকি আমাদের আরও ১৩ লাখ টাকা ঋণ আছে। এত টাকা কীভাবে হয়। উনাদের কাছেই তো রসিদ থাকার কথা। কৃষকদের কাছ থেকে ১৫ শতাংশ সুদ কীভাবে তারা দাবি করেন?

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ঈশ্বরদী উপজেলার ভাড়ইমারী গ্রামের ৪০ জন কৃষক ওই সমিতির নামে দলগত ঋণ হিসেবে ১৬ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। এর মধ্যে কেউ ২৫ হাজার, কেউ ৪০ হাজার টাকা করে ঋণ পান। দীর্ঘদিনেও সেই ঋণ ও সুদের টাকা পরিশোধ না করায় ২০২১ সালে ৩৭ জন কৃষকের নামে মামলা করে ব্যাংকটি।সম্প্রতি আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে ২৫ নভেম্বর ১২ জন কৃষককে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ।

বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর ব্যাপক আলোচনা, সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরে ২৭ নভেম্বর পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক শামসুজ্জামান গ্রেপ্তার হওয়া ১২ জনসহ ৩৭ কৃষকের জামিন মঞ্জুর করেন।

এ নিয়ে কৃষকদের বিরুদ্ধে ঋণ সংক্রান্ত মামলা ও ঋণের কিস্তি নিয়ে জটিলতার বিষয়টি তদন্ত করতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক। ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক (পরিদর্শন ও আইন) আহসানুল গণির নেতৃত্বে কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, সহকারী মহাব্যবস্থাপক (প্রকল্প ও ঋণ) আবদুর রাজ্জাক ও সহকারী মহাব্যবস্থাপক (আইন) আমিনুল ইসলাম।