পার্শবর্তী উপজেলার এক নারীর কথায় সরল বিশ্বাসে স্বপ্নের দেশ ইতালিতে যেতে গিয়ে আর্ন্তজাতিক মানবপাচারচক্রের খপ্পরে পড়ে বড় অংকের টাকা ও জীবন দুটিই খুয়েছেন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার সৈয়দ মশাহিদ আলী নামের এক ব্যবসায়ী। ইউরোপের দেশ ইতালি পাঠানোর নামে ওই ব্যবসায়ীকে লিবিয়া নিয়ে আটকে রেখে দফায় দফায় অমানবিক নির্যাতন করা হয়। নির্মম নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিও কলে দেখিয়ে দেশে থাকা পরিবারের কাছ থেকে কয়েক দফায় ২২ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ওই মানব পাচারচক্রের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ গত জুন মাসে আরও ১৬ লাখ টাকা দাবি করে ওই চক্র। তাদের দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় তাকে হত্যা করে লাশ গুম করেছে তারা।
সোমবার (২১ আগস্ট) দুপুর ২টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেছেন দিরাই উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের সৈয়দ মশাহিদ আলীর স্ত্রী সানোয়ারা বেগম। তাঁর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভাগ্নে এম বেলাল আহমদ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সানোয়ারা বেগম উল্লেখ করেন তাঁর স্বামী সৈয়দ মশাহিদ আলী একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে হঠাৎ একদিন আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের সদস্য পার্শবর্তী উপজেলা জগন্নাথপুরের পড়ারগাঁও গ্রামের শাহীন আহমদের স্ত্রী আমিনা বেগম তালুকদার ওরফে আকলিমা জানান তার স্বামী শাহীন আহমদ লিবিয়ায় থাকেন এবং শাহীনের মাধ্যমে তিনি আমার স্বামী মশাহিদ আলীকে লিবিয়া হয়ে ইউরোপের দেশ ইটালীতে পাঠাতে পারবেন। এসময় তার সহযোগী একই গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে রোকন আহমদ, মৃত ইরশাদ আলীর ছেলে তোতা মিয়া ও ছন্দন মিয়া এবং রঙ্গুম উল্লাহর ছেলে হারুণ মিয়া ও ইসহাক আলীর ছেলে শাহজাহান আহমদ তার সাথে ছিলেন এবং তারাও শাহীনের স্ত্রী আমিনার সাথে মিলে লিবিয়া হয়ে ইউরোপে লোক পাঠান বলে জানান। পরে আমিনা বেগমসহ তারা সবাই মিলে আমার স্বামীকে ৭ লাখ টাকার বিনিময়ে ইটালী পাঠানোর চুক্তি করে। শাহীনের স্ত্রী ও তার সহযোগীরা রোকন মিয়ার মাধ্যমে আমার স্বামী সৈয়দ মশাহিদ আলীর পাসপোর্ট (ইছ ০৪৪৫২৮৬) ও প্রথম কিস্তিতে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, আমিনা ও তার সহযোগীরা ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ নভেম্বর তার স্বামীকে প্রথমে দুবাই পাঠায়। দুবাই থেকে লিবিয়ায় নিয়ে পরে আরো ৩ লাখ টাকা গ্রহণ করে। লিবিয়ায় নেওয়ার পর আমিনাসহ মানবপাচারচক্রের মুলহোতা আমিনার স্বামী শাহীন আহমদ তার স্বামী সৈয়দ মশাহিদ আলীকে জিম্মি করে ও দফায় দফায় শারিরীক নির্যাতন ও হত্যা করে লাশ সমূদ্রে ফেলে দেওয়ার ও গুম করার ভয় দেখিয়ে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত কয়েক দফায় আমাদের কাছ থেকে মোট ২২ লাখ মুক্তিপণ আদায় করে। কিন্তু আমিনা বেগম ও তার সহযোগী মানবপাচারকারীরা তার স্বামীকে মুক্তি না দিয়ে বা ইটালী না পাঠিয়ে তার স্বামীকে গুম করে। এক পর্যায়ে গত ২১ জুন মানবপাচারচক্রের সদস্য শাহীন লিবিয়া থেকে ইমু অ্যাপসের মাধ্যমে ফোন করে জানান আরও ১৬ লাখ টাকা না দেওয়ায় নির্যাতনে আমার স্বামী মশাহিদ আলী মারা গেছেন।
সানোয়ারা বেগম সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, বিষয়টি জানার পর শাহীনের স্ত্রী আমিনা বেগম তালুকদার উরফে (আকলিমা) ও তার সহযোগী এ দেশীয় মানবপাচার চক্রের সদস্যদের কাছে আমার স্বামীকে জীবিত অথবা মৃত ফেরত চাইলে তারা আমার স্বামী সৈয়দ মশাহিদ আলীকে ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং এ বিষয় নিয়ে আর কথা বললে সন্তানাদিসহ আমাকে অপহরণ ও খুন গুম করার হুমকি দিয়ে চলছে। এ অবস্থায় তিনি ৬ বছর, ৩ বছর ও দেড় বছর বয়সি তিন শিশু সন্তানকে নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। এ বিষয়ে দিরাই থানায় অভিযোগ রুজু করতে গেলে থানাপুলিশ মামলা না নিয়ে আদালতে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেয় বলে জানান তিনি।
এ অবস্থায় সানোয়ারা বেগম তার স্বামী সৈয়দ মশাহিদ আলীকে (জীবিত অথবা মৃত) উদ্ধার এবং হাতিয়ে নেওয়া ২২ লাখ টাকা ফেরত পেতে এবং এই ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজিপি ও র্যাবের মহাপরিচালকসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ও সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ মশাহিদ আলীর বৃদ্ধ পিতা সৈয়দ আশহাদ আলী, চাচাতো ভাই সৈয়দ আকবর আলী, সৈয়দ মুজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য