মৌলভীবাজারে দুদকের গণশুনানি

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারে সরকারি সেবা ও সুবিধাদি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে উদ্ভুত সমস্যাদি শোনা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষে গণ-শুনানি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এসময় সরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় সম-পরিমাণ অভিযোগ জমা হয়। ১২টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অন্তত ৪০টিরও বেশী অভিযোগ পড়েছে। সেবা গ্রহীতারা সবচেয়ে বেশী অভিযোগ পড়েছে উপজেলা ভূমি অফিসের বিরুদ্ধে। মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধেও অভিযোগের শেষ নেই। সর্ব মিলিয়ে লিখিত ও মৌখিক ৪০ টিরও বেশী অভিযোগ পড়েছে। এর সবগুলোই শুনানী হয়। এছাড়াও অভিযোগ পড়েছে- জরিপ অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস, উপজেলা সমাজসেবা অফিস, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস, উপজেলা সমবায় অফিস, উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিস, উপজেলা প্রাথমিক/মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের বিরুদ্ধে। এ সময় সেবাগ্রহীতাদের আনিত অভিযোগ শুনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করা হলে সত্যতা শিকার করে লোকবল সংকট ও বিভিন্ন কারণ দর্শানা সরকারী কর্মকর্তারা। তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান আশ্বস্থ করে বলেন, যেসব দপ্তরের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তুলা হয়েছে সেই সব দপ্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, “সরকার বিপুল পরিমান অর্থ ব্যায় করেন দেশের উন্নয়নে বাজেটে। প্রতিটি বাজেট পূর্বের বাজেটকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বাজেটের ওই টাকা সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারলে দেশ সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালেশিযার মতো হয়ে যেত এ দেশ। কিন্তু দুর্নীতির কারণে সকল উন্নয়নকে ব্যার্থ করে দিচ্ছে”। দুদক মহা-পরিচালক আরোও বলেন, “রাষ্ট্রীয় বাজেটে প্রতি বছর লক্ষ কোটি টাকার প্রবৃদ্ধি ঘটলেও দুর্নীতির কারণে বরাদ্দকৃত অর্থের সদ্ব্যবহার হচ্ছেনা। তাই যাবতীয় উন্নয়ন প্রচেষ্ঠাকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছেনা”। সোমবার সকাল থেকেই গণ-শুনানি শুরু হয়। চলে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ গণ-শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের মহা পরিচালক (তদন্ত) মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন- মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আশরাফুল আলম খাঁন (রাজস্ব), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ারুল ইসলাম, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ কামাল হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান ও জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি আব্দুল কাদির মাহমুদ। গণ-শুনানিতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেন। এ সময় আনিত অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা সহ জনসাধারনের বক্তব্য শোনা হয়। উপস্থিত জনসাধারনের মধ্যে ভূক্তভোগী ২০ জনের মৌখিক অভিযোগ শোনা হয়। গত ২০০৮ সনে মৌলভীবাজার থেকে দুর্নীতি দমন ব্যুরোর অফিস উঠিয়ে নিয়ে হবিগঞ্জের সাথে সমন্বয় করার পর জেলাতে দুর্নীতি বেড়েছে উল্লেখ উপস্থিত করে জনসাধরান বলেন, “এখানকার বিআরটিএ, পাসপোর্ট অফিস, প্রতিটি উপজেলার পিআইও অফিস এবং অন্যান্য সংস্থা থেকে মাসোহারা ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশনে টাকা পাঠানো হয় বলে জনশ্রæতি আছে। যার ফলে মৌলভীবাজারের ব্যাপারে দুদকের মামলা দায়েরের পরিমাণ নিতান্তই নগণ্য। এমতাবস্থায় মৌলভীবাজারে দুদকের অফিস স্থানান্তর একান্ত প্রয়োজন। উল্লেখ্য, দুদকের পক্ষ থেকে প্রচারণার মাধ্যমে সদর উপজেলার ১২টি সরকারী অফিসসমূহের সেবা সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ তুলে ধরতে গত ২৮ জুলাই বিকাল ৪ ঘটিকার মধ্যে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে এই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।