মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় হাকালুকি হাওরে শনিবার সন্ধ্যার দিকে ঝোড়ো বাতাসের সময় আকাশ থেকে নিচে নেমে আসা ফানেলের মতো একটি দৃশ্য দেখা যায়।
এই ঘটনার ভিডিও অনেকেই মোবাইল ফোনে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। ফেসবুকে কেউ এ ঘটনাকে ‘অলৌকিক’ বলেন। আবার কেউ কেউ ‘আকাশ হাওর থেকে পানি শুষে নিচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেন। আসলে এটা টর্নেডো, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এটা ঘটেছে বলে আবহাওয়াবিদেরা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে, তা সাধারণত আমাদের দেশে দেখা যায় না। এটি মূলত এক ধরনের টর্নেডো।
উপজেলার জায়ফরনগর ও পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকাজুড়ে হাকালুকি হাওর বিস্তৃত।
শনিবার সকাল থেকে প্রচণ্ড গরম পড়েছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। একই সঙ্গে চলে লোডশেডিং। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে হঠাৎ আকাশে মেঘ করে। ঝড় শুরু হয়। এ সময় হাওরে ফানেলের মতো দৃশ্য চোখে পড়ে। দু-তিন মিনিট তা স্থায়ী হয়।
এ ব্যাপারে সে সময় কণ্ঠিনালা নদীর রাবার বাঁধ প্রকল্প এলাকায় অবস্থানরত এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, গরম আর লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে কয়েকজন মিলে হাওর এলাকায় গিয়েছিলাম। হঠাৎ আকাশ কালো হয়ে যায়। এ সময় দেখি, আকাশ থেকে হাতির শুঁড়ের মতো কিছু হাওরের মাঝখানে নেমে পড়ছে। সঙ্গে তুফান আর বৃষ্টি। খুব ভয় পাই। এটা দুই থেকে তিন মিনিটের মতো ছিল।
বিষয়টির ব্যাখ্যা হিসেবে আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, পানির উপর শক্তিশালী টর্নেডো সৃষ্টি হলে প্রচণ্ড বেগে ঘূর্ণয়মান বাতাসের টানে পানি স্তম্ভাকারে উপরের দিকে উঠতে থাকে। পানি দিয়ে মোড়ানো বাতাসের তৈরি টর্নেডোর ফলে এমনটা হয়। এটাকে Water Spout বা জলস্তম্ভ বলা হয়। বাংলাদেশে এটি ‘মেঘশূর’ নামেও পরিচিত।
সাঈদ আহমদ আরও চৌধুরী বলেন, এই টর্নেডোর ভেতরে ঘূর্ণনের শক্তি ঘন্টায় ২০০ কিলোমিটার হতে পারে। কেউ যদি এর মধ্যে পড়ে যায়, তবে উড়িয়ে নিতে পারে। টর্নেডো বিষয়ক তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, টর্নেডো মানে ধ্বংসাত্মক প্রাকৃতিক দুযোগ। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে যখন টর্নেডো হয়, তখন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। টর্নেডো মূলত বাতাসের তাণ্ডবে প্রবলবেগের গতির শক্তিতে ক্ষতি করে।
মন্তব্য