মৌলভীবাজারে বৃক্ষ রোপণের শর্তে মুক্তি পেলেন আসামিরা

বৃক্ষ রোপণের শর্তে মুক্তি পেলেন আসামিরা

একশটি বৃক্ষ রোপণসহ বিভিন্ন শর্তে টানা সাত বছর আদালতে হাজির হওয়ায় অভিযুক্তদের কারাগারে না পাঠিয়ে সংশোধনের সুযোগ দিয়েছে মৌলভীবাজার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।

সোমবার (৮ আগস্ট) দুপুরে মৌলভীবাজার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান ব্যতিক্রমী ও দৃষ্টান্তমূলক এ রায় দেন।

আদালত উপস্থিত সকলের তিনি উদ্দেশ্যে বলেন, লঘুদণ্ডে অনেকেই কারাগারে গিয়ে আসামির সংস্পর্শে ভবিষ্যতে গুরুতর অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। প্রবেশনের ফলে নিজেকে সংশোধন ও অপরাধ প্রবণতা থেকে বিরত থাকতে অভিযুক্তরা উৎসাহী হবে। দেশের কারাগারগুলোয় প্রায় প্রতিদিনই ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত আসামি রাখা হচ্ছে। প্রবেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লঘু শাস্তি প্রাপ্ত অপরাধীরা সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরে আসবে ও কারাগারগুলো মাত্রাতিরিক্ত কয়েদি হতে ভারমুক্ত হবে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১১ মার্চ মৌলভীবাজারের জুড়ী থানার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর চন্দন কুমার দাস বাদী হয়ে অভিযুক্ত কবির আহমদ ও মুহিবুর রহমানসহ অজ্ঞাতনামা ৭ থেকে ৮ জনকে আসামি করে মামলা (জি. আর ২৬/২০১৫-জুড়ী) দায়ের করেন। সাক্ষ্য প্রমাণে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৩২৩ ধারার অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় তাদের প্রত্যেককে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত।

পরে অভিযুক্তদের জীবনে প্রথমবারের মতো অপরাধ বিবেচনায় ও তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ গুরুতর না হওয়ায় এবং আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে প্রায় ৭ বছর নিয়মিত হাজিরা দেওয়ার কারণে আদালত তাদেরকে কারাগারে না পাঠিয়ে সংশোধনের সুযোগ দেয়।

প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্সের ১৯৬০ এর অধীনে ১০০টি গাছ রোপণ, নতুন করে কোনো অপরাধে জড়িত না হওয়া, মাদক সেবন থেকে বিরত থাকা, শান্তি রক্ষা ও সদাচরণ করা, আদালতের নির্দেশমতো হাজির হওয়া ইত্যাদি শর্তে মুক্তি দেন আদালত। এই শর্তগুলো প্রতিপালনের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রবেশন কর্মকর্তাকে পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে আদালতকে অবহিত করবেন।

পাবলিক প্রসিকিউটর রাধাপদ দেব সজল বলেন, অধ্যাদেশটি অনেক পুরোনো হলেও প্রয়োগ ছিল না। উক্ত অধ্যাদেশটি বাস্তবায়নে প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের নির্দেশনার আলোকে মৌলভীবাজার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে এর দৃশ্যমান প্রয়োগ শুরু হয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাবেক পিপি এ. এস. এম. আজাদুর রহমান বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধী কারাগারে আবদ্ধ কক্ষে নয়, মুক্ত বাতাসে পরিবার পরিজনের সান্নিধ্য পাবেন যা অভিযুক্তদের সংশোধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রথম ও লঘু অপরাধের ক্ষেত্রে প্রবেশন খুব ইতিবাচক ও প্রশংসনীয়। এর মাধ্যমে অভিযুক্তরা নিজেদের সংশোধনের চমৎকার সুযোগ পাচ্ছেন।

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বদরুল হোসেন ইকবাল বলেন, প্রথম ও লঘু অপরাধের ক্ষেত্রে প্রবেশন খুব ইতিবাচক ও প্রশংসনীয়। এর মাধ্যমে অভিযুক্ত নিজেদের সংশোধনের চমৎকার সুযোগ পাচ্ছেন।

আদালত উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে মৌলভীবাজার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান বলেন, লঘুদন্ডে অনেকেই কারাগারে গিয়ে আসামীর সংস্পর্শে ভবিষ্যতে গুরুতর অপরাধ প্রবণ হয়ে ওঠে। প্রবেশনের ফলে নিজেকে সংশোধন ও অপরাধ প্রবণতা থেকে বিরত থাকতে অভিযুক্তরা উৎসাহী হবে। দেশের কারাগারগুলোয় প্রায় প্রতিদিনই ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত আসামী রাখা হচ্ছে। প্রবেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লঘু শাস্তি প্রাপ্ত অপরাধীরা সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরে আসবে।