প্রথমবারের মতো নারী ফুটবলে ভারত বধ

এরআগে ভারতের বিপক্ষে কখনো জেতেনি বাংলাদেশ। ১০ ম্যাচে ২০১৬ সালের আসরে গ্রুপ পর্বে করা ড্র-ই গতকালের আগ পর্যন্ত সর্বোচ্চ প্রাপ্তি ছিল সাবিনা-কৃষ্ণাদের। গতকাল কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে সেই প্রাপ্তিকে চাপিয়ে গেল বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো ভারতকে ৩-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে নাম লেখালো ছোটনের শিষ্যরা। আগামী ১৬ই সেপ্টেম্বর দিনের প্রথম সেমিফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভুটান। একইদিন দ্বিতীয় সেমিফাইনালে স্বাগতিক নেপালের মুখোমুখি হবে ভারত। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের আগের সবক’টি আসরে চ্যাম্পিয়ন ভারত। বাংলাদেশ কেবল একবার ফাইনাল খেলেছে, ২০১৬ সালে। শিলিগুড়িতে অনুষ্ঠিত ওই আসরে এই ভারতের কাছে ৩-১ গোলে হেরে স্বপ্ন ভঙ্গ হয় সাবিনাদের। তবে এবার আসরের শুরু থেকেই অন্য এক বাংলাদেশকে আবিষ্কারগ্রুপের প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপকে ৩-০ গোলে হারিয়ে আসরে শুভ সূচনা করে বাংলাদেশ। সাবিনার হ্যাটট্রিকে পরের ম্যাচে লাল সবুজের জয়টা এসেছিলো ৬-০ গোলে। ওই ম্যাচ শেষে পাকিস্তান কোচ আদিল রিজকি বাংলাদেশ দলকে টুর্নামেন্টের সেরা দল হিসেবেই স্বীকৃতি দেন। গতকাল ভারত ম্যাচের তারই ছাপ রাখে বাংলাদেশের মেয়েরা। শুরু থেকে আত্মবিশ্বাসী এক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে দশরথের আঙিনায়। মারিয়া মান্দা-মনিকা চাকমা-সানজিদা খাতুন মাঝ মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মসৃণ করে দেন আক্রমণের পথ। সপ্তম মিনিটে ভারতের জালে বল জড়ালেও গোল পায়নি বাংলাদেশ। আঁখির পাস ধরে সানজিদা খাতুন আড়াআড়ি ক্রস বাড়িয়েছিলেন গোলমুখে। স্বপ্না ও কৃষ্ণা রানী সরকার ছুটেন হেডের জন্য; ভারতের গোলরক্ষক অদিতি চৌহান বল ধরতে যাওয়ার সময় কৃষ্ণার সঙ্গে সংঘর্ষে পড়ে যান। স্বপ্না টোকায় বল জালে জড়ালেও রেফারি বাজান ফাউলের বাঁশি। দ্বাদশ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার উচ্ছ্বাসে মাতে বাংলাদেশ। মাঝমাঠ থেকে বল পায়ে এগিয়ে আক্রমণের সুর বেঁধে দিলেন সাবিনা, তার বাড়ানো পাস ধরে কৃষ্ণা দিলেন বক্সের দিকে ছোটা সিরাত জাহান স্বপ্নাকে। বাঁ পায়ের নিখুঁত প্লেসিং শটে লক্ষ্যভেদ করেন ২১ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। ২০১৬ সালে শিলিগুঁড়ির আসরের ফাইনালে ভারতের কাছে ৩-১ গোলে হেরে যাওয়া ম্যাচেও গোল করেছিলেন স্বপ্না। একটু পর ব্যবধান দ্বিগুণের সুযোগ নষ্ট করেন এই ফরোয়ার্ড। মাঝমাঠ থেকে মনিকা চাকমার লং পাস গতিতে ভারতের ডিফেন্ডারকে পেছনে ফেলে নাগাল পেলেও ঠিকঠাক শট নিতে পারেননি স্বপ্না। তার দুর্বল শট পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসা অদিতির পায়ে লেগে প্রতিহত হয়। শুরুর ২০ মিনিটে অধিকাংশ সময়ই খেলা হয় ভারতের অর্ধে। গোল শোধে মরিয়া চেষ্টা করলেও সান্ধিয়া রাঙ্গানাথন, অঞ্জু তামাংদের প্রচেষ্টা কখনো জমে যায় আত্মবিশ্বাসী রুপনা চাকমার গ্লাভসে, কখনো যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে উড়ে। দুই মিনিট পর কৃষ্ণা রানী সরকারের দারুণ গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বাংলাদেশ। শিউলি আজিমের থ্রো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আলতো টোকায় স্বপ্নাকে বল বাড়িয়ে কৃষ্ণা বক্সেই সুবিধাজনক জায়গা খুঁজে নেন। স্বপ্নার কাছ থেকে ফিরতি পাস পেয়ে মুগ্ধতা ছড়ানো নিখুঁত শটে কাছের পোস্ট দিয়ে জাল খুঁজে নেন কৃষ্ণা। ২০২০ সালে অলিম্পিক বাছাইয়ের পর আবারো ভারতের জালে গোল পেলেন ২১ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। চলতি সাফেও খুললেন গোলের খাতা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে স্বপ্না আবারো লক্ষ্যভেদ করলে ৩-০তে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। তিন গোলে পিছিয়ে পড়ে ভারত চেষ্টা করেছে। কিন্তু রক্ষণে আঁখি, শিউলি আজিমদের পরাস্ত করতে পারেনি দলটির ফরোয়ার্ডরা। যার ফলে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম হারের স্বাদ নিয়ে ফিরে ভারত। এটি সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের প্রথম হার। ইতিহাস গড়া এই জয়ে সেমিফাইনালে নেপালকে এড়িয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষ ভুটানকে পেলো বাংলাদেশ।