খুলনার দিকে সবার নজর

বিএনপির গণসমাবেশ আজ

এদিকে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, খুলনার সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতেই আওয়ামী লীগের নির্দেশে বাস ও লঞ্চ মালিকরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই ধর্মঘট ডেকেছেন। কিন্তু নেতাকর্মীদের কেউ হেঁটে, আবার কেউ দীর্ঘ পথ ভেঙে ভেঙে রিকশা-মোটরবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহনে সমাবেশস্থলে যাচ্ছেন। কিন্তু এ ধর্মঘটের মাধ্যমে ভোগান্তি বেড়েছে সাধারণ মানুষের। বাস বন্ধ করে দেওয়ার পর সাধারণ মানুষ লঞ্চে করে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন, কিন্তু শুক্রবার তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর ফলে সারা দেশ থেকে খুলনা কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। খুলনায় কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারছে না, আবার কোনো যানবাহন ছেড়ে যাচ্ছে না। খুলনার সঙ্গে ১৮টি রুটের বাস চলাচল বন্ধ। সব মিলিয়ে এতে দূর-দূরান্তের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এছাড়া পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা শহরের ভেতরে ভ্যান-রিকশা ও ইজিবাইকে তল্লাশি করছেন। এ সময় অনেকে মারধরেরও শিকার হচ্ছেন বলে জানান স্থএদিকে বিভিন্ন সূত্রের খবর, সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ নগরীসহ বিভিন্ন জেলা বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড় করছে। যার সংখ্যা এখন পর্যন্ত প্রায় দুইশ হবে বলে দাবি বিএনপির। মাগুরা জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের একটি বাসসহ সবাইকেই সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ আটক করেছে। বাগেরহাট জেলা বিএনপির ৫০ নেতাকর্মীকে সদর থানা পুলিশ আটক করেছে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। আটক করা হয়েছে মোরেলগঞ্জ থেকে আসা ১৩ জশুক্রবার সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনভীতি রোগে ভুগছে। সরকার জনগণকে ভয় পায় বলেই বিএনপির সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করছে। খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে বাধা দিয়ে সরকার পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করা হয়েছে। গণপরিবহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা রামদা, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের কথা চিন্তা করে না। তারা সাধারণ মানুষের কথা ভাবলে গণসমাবেশ ঠেকাতে গণপরিবহণ বন্ধ করত না। এই সরকার সবকিছু করতে চায় মানুষকে বাদ দিয়ে। তারা রাষ্ট্র চালাতে চায় মানুষকে বাদ দিয়ে। তারা নির্বাচন করতে চায় জনগণকে ছাড়া। জনগণ জেগে উঠলে ক্ষমতা ছাড়তে হবে-তারা সারাক্ষণ এই ভয়ে থাকে। এই সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। খুলনায় পরিকল্পিতভাবে জীবনযাত্রা ব্যাহত করা হচ্ছে দাবি করে গণসমাবেশে যেন বাধা তৈরি না করা হয় সে আহ্বান জশুক্রবারের আগেই পৌঁছেছেন নেতাকর্মী, ট্রেন-ট্রলারেও আসছেন অনেকে : বাস ও লঞ্চ ধর্মঘটের কারণে মাগুরা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, যশোরসহ বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা সমাবেশের দুদিন আগে খুলনায় পৌঁছান। অনেকেই বাসে, মাইক্রো, মোটরসাইকেলে যান। আবার অনেকে বাধা পেয়ে হেঁটেই পৌঁছান। নেতারা জানান, তাদের পুলিশের বাধার সম্মুখীনও হতে হয়েছে। তবে তারা কৌশল অবলম্বন করে খুলনা এসে পৌঁছেছেন। খুলনায় তারা নিকট-আত্মীয়দের বাড়িতে উঠেছেন। এছাড়া স্থানীয় বিএনপি নেতারা দূর থেকে আসা নেতাকর্মীদের আবাসন ও খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। গণসমাবেশের মিডিয়া কমিটির সদস্য এহতেশামুল হক শাওন যুগান্তরকে বলেন, নেতাকর্মীরা শত বাধা পেরিয়ে খুলনায় চলে এসেছে। শুক্রবার সকালেই নগরীতে প্রায় অর্ধলাখ লোক পৌঁছে গেছে। অনেকে নদীপথ, ট্রেনসহ বিভিন্নভাবঝিনাইদহ জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি আবদুস সালাম জানান, গণসমাবেশে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার বিকালে ঝিনাইদহ সদর থেকে আমরা ২০ জন খুলনায় এসেছি। কেউ উঠেছেন আত্মীয়স্বজনের বাসায়, কেউ বা মেস ও হোটেলে। 

সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল ইসলাম জানান, শুক্রবারের মধ্যেই ৩০ ভাগ নেতাকর্মী খুলনায় পৌঁছে গেছে। বাকিরা বিভিন্ন মাধ্যমে যাবে। 

নড়াইল জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে বাস চালু থাকায় অনেক নেতাকর্মী আগেই খুলনায় অবস্থান নিয়েছেন। পরে বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কালিয়া ও লোহাগড়া থেকে নেতাকর্মীরা ট্রলারে খুলনা যান। মাগুরা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আকতার হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার রাতেই অনেক নেতাকর্মী বাসে করে খুলনা চলে গেছেন। আবার অনেকে শুক্রবার যশোর পর্যন্ত বাসে গিয়ে, সেখান থেকে ট্রেনে করে খুলনা গেছেন। বাকি নেতাকর্মীরা যশোর যাবেন। পরে সেখান থেকে ভেঙে-ভেঙে ছোট যানবাহন ও মোটরসাইকেলে করে খুলনা পৌঁছাবেন। দুর্ভোগ ও কষ্ট করে হলেও মাগুরা বিএনপির নেতাকর্মীরা খুলনার সমাবেশে যোগদান করবেন

জানা যায়, মহাসড়কে ইজিবাইক, মাহেন্দ্র, নসিমন, করিমন চলাচলের প্রতিবাদে গত ২০ ও ২১ অক্টোবর খুলনার বাস মিনিবাস কোচ মালিক সমিতি ও খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন যৌথভাবে বাস ধর্মঘটের আহবান করেন। এরপর খুলনা লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশনের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, বেতন বৃদ্ধিসহ ১০ দফা দাবিতে তারা ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট আহ্বান করেছেন। এর সঙ্গে বিএনপির সমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই।

এদিকে যাত্রীপ্রতি এক টাকা ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে খুলনার পূর্ব ও পশ্চিম রূপসা ইঞ্জিনচালিত নৌকা মাঝি সংঘ ২২ অক্টোবর ২৪ ঘণ্টা নদীতে ট্রলার পারাপার বন্ধ ঘোষণা করেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি রেজা ব্যাপারী ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন ব্যাপারী। শুক্রবার রাতে রূপসা ঘাটে এ সংক্রান্ত নোটিশ টানানো হয়েছে। শাহাদাৎ ব্যাপারী বলেন, এক টাকা ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে আমরা বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছি। কিন্তু এতে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তে এ কর্মসূচি ঘোষণা হয়েছে।। 

ে এসেছে।