সিলেট আওয়ামী লীগে জাকিরকে নিয়ে যে অসন্তোষ

দিন দিন সিলেট আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকট হচ্ছে। কমিটি গঠনের ৩ বছরের মাথায় এসে ফের বিতর্কিত হতে শুরু করেছে সিলেট আওয়ামী লীগ। অথচ সিটি নির্বাচনে পরাজয়ের কারণে সম্পূর্ণ নতুন ফরম্যাটে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে সিলেট আওয়ামী লীগের এই অভ্যন্তরীণ বিরোধকে অশনিসঙ্কেত হিসেবে দেখছে তৃণমূল নেতারা। আর অভিযোগের তীরে বিদ্ধ হচ্ছেন সিলেট নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন। সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হতে নিজেদের লোক দিয়ে কমিটি গঠন করছেন বলে গতকাল সিলেটে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন নেতাকর্মীরা। এ দিকে- জাকিরের কর্মকাণ্ডে বিব্রত আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও। ২০১৯ সালের জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের চার নেতার নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে সম্মেলনের শেষ দিকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাদের নাম ঘোষণা করেন। ওই সময় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন বর্তমান কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউকিন্তু নাদেলকে পাশ কাটিয়ে তখন সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল জাকির হোসেনকে। তখন সিলেটের নেতারা অভিযোগ করেছিলেন; কেন্দ্রীয় এক নেতার সুনজরে থাকার কারণে আলোচনায় না থেকেও জাকির হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। পরে অবশ্য দলের ঐক্যের স্বার্থে নেতারা মুখ বুঁজে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেন। টুঁ শব্দ করেননি নাদেলও। অবশ্য কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন নাদেল। তবে- শুরু থেকে জাকির হোসেন দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চলতে পারেননি। তিনি তার মত করেই দল পরিচালনা করেন। এতে করে বিব্রত হন মহানগর সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিক মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদও। সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেট মহানগরে দল গোছাচ্ছে আওয়ামী লীগ। সাধারণ সম্পাদক হওয়ার কারণে জাকিরকেই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হচ্ছে। কিন্তু দল গোছাতে গিয়ে উল্টো তিনি দলের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছেন। আর সেটি ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে শুরু করছে। এ নিয়ে ২৫ নং ও ১৮ নং ওয়ার্ডে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মঞ্চ ভাঙচুরসহ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন নেতারা।

 আরও কয়েকটি ওয়ার্ডে উত্তেজনা, ক্ষোভ দেখা দেয়। আর সবই হয়েছে জাকিরের কারণে। নেতারা জানিয়েছেন- সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হতে জাকির তার পছন্দের লোকদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন করতে চাইছেন। কোনো কোনো ওয়ার্ডে তিনি একক ক্ষমতা বলে কমিটি গঠন করেও দেন। এ কারণে হচ্ছে ক্ষোভ-বিক্ষোভ। এই অবস্থায় চলতি মাসের শেষ দিকে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। ওই বৈঠকে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন নেতারা। এদিকে- গতকাল সিলেটে সংবাদ সম্মেলন করে জাকিরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিষোদ্‌গার করেছেন ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে জাকিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন সিলেট মহানগরীর ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কমিটির সহ-সভাপতি সৈয়দ আতিকুর রব চৌধুরী জুয়েল। শনিবার দুপুরে সিলেট জেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সৈয়দ আতিকুর রব চৌধুরী জুয়েল বলেন, ‘তৃণমূল আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন বিভিন্ন ওয়ার্ডে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া চলছে। গত ১৩ অক্টোবর নগরীর ৬ নং ওয়ার্ডে বিতর্কিত একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

 মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন নিজের স্বার্থ হাসিল করতে তৃণমূলের ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের কোনো মূল্যায়ন না করে তার আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে পকেট কমিটি গঠনে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন ওয়ার্ডে সম্মেলনকালে কাউন্সিলরসহ প্রার্থীগণ ক্ষোভ ও বিদ্রোহ করেছেন। জুয়েল বলেন, ‘আমাদের ৬ নং ওয়ার্ডে ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের কথা ছিল। কিন্তু মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বুঝতে পারেন ভোটের মাধ্যমে তার পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করানো যাবে না। তখন তিনি কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজের পছন্দের প্রার্থীদের পদে আনতে বিভিন্ন কলাকৌশল অবলম্বন করা শুরু করেন। আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন- জাকির হোসেন নিজের স্বার্থ আদায়ে সম্মেলনের দিন জোরপূর্বক একটি কাগজে স্বাক্ষর নিতে চান। 

হুমকি দিয়ে বলেন; স্বাক্ষর না করলে বহিষ্কার করে বের করে দিয়ে হাতে ‘লেম’ ধরিয়ে দেব। এমন হুমকিসূচক আচরণে আমিসহ কয়েকজন ভীত হয়ে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হই। তবে সভাপতি পদে অন্য প্রার্থী আবুল বশর হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী শেখ আব্দুর রহিম খোকন ও নাজমুল হোসেনের স্বাক্ষর না নিয়েই তার নিজের পছন্দের ব্যক্তিদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নাম ঘোষণা করেন। আমরা তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বারবার ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের দাবি জানালেও তিনি আমাদের মতামতকে মূল্যায়ন করেননি। আতিকুর রব চৌধুরী জুয়েল আরও বলেন, ‘৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যে বিতর্কিত কমিটি জাকির হোসেন দিয়েছেন, এটি একটি নখদন্তহীন অথর্ব কমিটি। সভাপতি পদে যার নাম বলেছেন, তিনি আওয়ামী লীগ করেন বটে, তবে বয়সের ভারে ন্যুব্জ এবং দলের দুর্দিনে দলীর কোনো অনুষ্ঠানেই তাকে দেখা যায়নি।

 আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জাকির যাকে মনোনীত করেছেন, সেই জাহিদুল হোসেন মাসুদ ৬ নং ওয়ার্ডের ছাত্রলীগ, যুবলীগ পেরিয়ে এসে বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এতে সন্দেহ নেই। তবে তিনি সম্পর্কে জাকির হোসেনের ভাগ্নে। মাসুদের আপন বড় ভাই শহীদুল হোসেন আহমদ মামুন ৬ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং আসন্ন কাউন্সিলে ৬ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি পদে প্রার্থী। আপন ছোটভাই মঞ্জু জামাতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।’ সংবাদ সম্মেলনে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।ল আলম চৌধুরী নাদেল।