সেই পরাজিত প্রার্থীর টাকা ফেরত চাওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি

টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটে পরাজিত হয়ে ভোটের পূর্বে বিতরণকৃত টাকা ফেরত চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাসাইল উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্ত করছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা নিয়ে ভোট না দেওয়ায় জেলা পরিষদ নির্বাচনে হেরে যান বাসাইল উপজেলার সদস্য প্রার্থী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। এরপর থেকেই টাকা গ্রহণকারী ভোটাররা ইতোমধ্যে অনেকেই টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ভোটের পূর্বে বিতরণকৃত অন্তত পাঁচ লাখ টাকা পরাজিত ওই প্রার্থী ফেরত পেয়েছেন।

বাসাইল উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্র মতে, বাসাইলে পরজিত প্রার্থীর টাকা ফেরত চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের বিষয়টি দৈনিক যুগান্তরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম সংবাদ প্রচার করে। এরপরই নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তদন্ত করতে চিঠি দেওয়া হয়। 

এরই প্রেক্ষিতে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক ড.আতাউল গনি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে দুই দিনের মধ্যে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য চিঠি প্রেরণ করে। 

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ এইচ কামরুল হাসান বলেন, নির্বাচনের দুইদিন পরে একজন পরাজিত প্রার্থী টাকা ফেরত চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। বিষয়টি আমরা নির্বাচন কমিশনকে অবগত করি। গত রোববার নির্বাচন কমিশন ঘটনাটি তদন্তের জন্য জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক ড. আতাউল গনিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলেছেন। বর্তমানে বাসাইল উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্ত করছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রফিকুল ইসলাম উপজেলার ফুলকি ইউপির ৮জন, হাবলা ইউপির ৫, পৌরসভার ৫, সদর ইউপির ১১, কাউলজানী ইউপির ৯, কাঞ্চনপুর ইউপির ৫ ও কাশিল ইউপির ৭ জনের প্রত্যেকজনকে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে সর্বমোট ১০ লাখ টাকা বিতরণ করেছিলেন। 

এ বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, ভোটাররাই একা দেখা করার কথা বলে বিভিন্ন পরিমাণের টাকা দাবি করে আসছিলেন। তাই নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার লোভে পড়ে ভোটারদের মাঝে টাকা বিতরণ করেছিলাম। ভোটে হেরে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে খুব ঝামেলার মধ্যে রয়েছি। ঘটনা জানতে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা গতকাল সোমবার তার অফিসে ডেকেছিলেন। যা সত্য আমি তাই বলে দিয়েছি। 

এ বিষয়ে বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, নির্বাচন কমিশন অন্ধ। কারণ তাদের কিছই করার ক্ষমতা নেই। জেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য একজন প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্য সভা সমাবেশ করেছেন। অভিযোগ দেওয়া হলেও নির্বাচন অফিস কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি বহু পুরনো ব্যপার। সে হয়ত আবেগের বশে স্ট্যাটাস দিয়েছে। 

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজি গাউস বলেন, রফিকুল ইসলাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। গত বাসাইল সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সে এখন দলের কেউ না।  

বাসাইল উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মনি শংকর রায় বলেন, জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এ বিষয়টি তদন্ত করার জন্য আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেছি। পরাজিত প্রার্থী রফিকুল ইসলামকেও ডেকেছিলাম। তদন্ত শেষের দিকে। বুধবার তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক ড. আতাউল গনি বলেন, যে কোনো নির্বাচনে অবৈধভাবে টাকার ছড়াছড়ি হলে নির্বাচনী আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে। ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরেছি ভোট সংগ্রহ করতে গিয়ে এক প্রার্থী ভোটারদের টাকা দিয়েছেন। ফলাফল ঘোষণার দুই দিন পর বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। তবে নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলেনি বা কেউ কোনো অভিযাগও করেনি। নির্বাচন কমিশন বিষয়টি জানতে পেরে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য একটি চিঠি দিয়েছেন। যেহেতু ঘটনাটি বাসাইল উপজেলার। তাই বাসাইল উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পেলেই নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।