সুফিয়া বেগম।মধ্য বয়সী সুফিয়া হবিগঞ্জের মাধবপুর পৌর শহরের পূর্ব মাধবপুরের বাসিন্দা।অকালে স্বামী জামাল মিয়াকে হারিয়ে পাঁচ সন্তানকে নিয়ে পড়েন চরম বিপাকে।তাই বাধ্য হয়ে অভাবের সংসার চালাতে ও সন্তানদের মুখে দুই বেলা দু’মুঠো ভাত তুলে দিতে দালালের প্রলোভনে সচ্ছলতার আশায় সৌদি আরবে গিয়ে গৃহকর্মীর কাজ করতে রাজ৫ বছরের কন্যা আয়েশা আক্তারকে কোলে নিয়ে আদর করে বিদায় নিয়েছিলেন।ছোট্ট আয়েশা ‘আম্মু আম্মু’ বলে চিৎকার করলেও বুকে পাথর বেঁধে দিন বদলের স্বপ্নে সৌদি আরবের পথে রওনা করেছিলেন। কে জানত এটাই হবে তাঁর শেষ বিদায়! বৃহস্পতিবার তিনি কফিনবন্দি হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
গত এপ্রিলের শুরুতে তিনি দালালের মাধ্যমে সে দেশে পাড়ি জমান।সেখানে পৌঁছানোর দু-তিন দিন পরই তিনি দেশে পরিবারের সদস্যদের কাছে ফোনে ফেরার আকুতির কথা জানান।
সুফিয়া বলেন, তিনি খুব বিপদে আছেন; তাঁকে যেন উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। পরিবারের সঙ্গে এটাই ছিল তাঁর শেষ যোগাযোগ। চার-পাঁচ দিন পর দালালের মাধ্যমে সন্তানরা জানতে পারে সুফিয়া মারা গেছেন।
বিদেশযাত্রার সময় সুফিয়া তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে গিয়েছিলেন। তাঁর লাশ বাড়িতে পৌঁছার পর এক শোকের আবহ সৃষ্টি হয়। সন্তানরা মৃত মাকে দেখে অঝরে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সুফিয়ার বড় ছেলে জাকির হোসেন (২০) জানান, তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পর পাঁচ ভাইবোনের সংসারে তীব্র অভাব-অনটন দেখা দেয়। পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে তাদের মা সৌদি আরব যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। উপজেলার সুন্দাদিল গ্রামের দালাল ফিরোজ মিয়ার মাধ্যমে তাঁকে সে দেশে পাঠানো হয়।
সৌদি যাওয়ার পর তাঁর মায়ের ওপর বাড়ির মালিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন শুরু করেন। মৃত্যুর আগে তাঁর মা সুফিয়া ফোনে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছিলেন। এ নিয়ে তিনি দালালের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন। কিন্তু তারা কোনো সহযোগিতা করেনি।
প্রতিবেশী তিতন মিয়া সরদার বলেন, প্রথমে বাবা এবং পরে মাকে হারিয়ে একবারেই অসহায় অবস্থায় পড়েছে পরিবারটি। সরকারিভাবে তাদের সহযোগিতা না দিলে বিপন্নতা চরমে পৌঁছাবে। এ সহায়তা পেলে হয়তো বাবা-মা হারা শিশু সন্তানরা বাঁচতে পারবে।
মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুর আহসান জানান, পরিবারটি যাতে আর্থিক অনুদান ও ক্ষতিপূরণ পায়, সে বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।মাধবপুর থানার ওসি রকিবুল ইসলাম খান জানান, সুফিয়ার লাশ দেশে আসার খবর তিনি জেনেছেন। প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।
মন্তব্য