ব্যাটারদের দিনে নায়ক শামি, ফাইনালে ভারত

শঙ্কা, ভয়, ফিসফাস- নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পারবে তো ভারত! কিউইরা যেন বিশ^কাপে ভারতের যমদূত। ২০১৯ এ ওল্ড ট্রাফোর্ডে বিরাট কোহলির দলকে দেখিয়ে দিয়েছিল দেশে ফেরার পথ। এবার নিজ মাঠেও কি হবে একই পরিনতি! তবে এবার নিজ মাঠে যেন অন্য এক ভারত। টানা ৯ ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালের টিকিট কেটেছিল। আর সেমিফাইনালে ব্যাটারদের দিনে বল হাতে ঝড় তুললেন মোহাম্মদ শামি। মুম্বইয়ে এদিন সেঞ্চুরি করলেন দুই দলের তিন ব্যাটার। তবে বল হাতে ৭ উইকেট নিয়ে দিনশেষে নায়ক মোহাম্মদ শামি। আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলো ভারত। গতকাল আসরের প্রথম সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৭০ রানে হারায় রোহিত শর্মার দল। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে টসে জিতে ব্যাট হাতে শুরুটা করলেন অধিনায়ক রবাকি কাজটা করলেন বিরাট কোহলি আর শ্রেয়াস আইয়ার। বিরাট রেকর্ড করলেন সেঞ্চুরির ফিফটি হাঁকিয়ে। এতে ভারতের সংগ্রহ পৌঁছে ৩৯৭/৪-এ। জবাব দিতে নেমে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় কিউই ব্যাটসম্যানরা। ড্যারিল মিচেল ব্যাটে ধার দেখালেন । কিন্তু তাকে অপর প্রান্তে সঙ্গ দেয়ার মতো যেন কেউ ছিলেন না। একে একে শুরুর চার উইকেটই নেন মোহাম্মদ শামি। পরে ১৩৪ রান করা মিচেলের উইকেট নিয়ে সব আলো নিভিয়ে দেন ব্ল্যাক ক্যাপদের। কোহলির ৫০তম সেঞ্চুরির রেকর্ড ছাপিয়ে শামি বনে যান হিরো। ৯.৫ ওভারে তার শিকার ৭ উইকেট মাত্র ৫৭ রান খরচ করে। নিউজিল্যান্ড থামে ৩২৭ রানে। ১৯৮৩ তে প্রথম বিশ্বকাপ জেতে ভারত কপিল দেবের নেতৃত্বে। এরপর মেহেন্দ্র সিংহ ধোনির নেতৃত্বে আসে ২০১১ তে দ্বিতীয় শিরোপা। ১২ বছর পর আবারো একটি শিরোপার দিকে তাদের চোখ যেখানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রোহিত শর্মা। ৩৯৮ রানের লক্ষ্য। জাসপ্রীত বুমরাহর প্রথম বল। ডেভন কনওয়ের চার পয়েন্ট দিয়ে! এক বল পর আরেকটি চার। পরের ৩টি বল ডট দিয়ে অবশ্য ফিরে এসেছেন বুমরাহ। তবে নিউজিল্যান্ড আভাস দেয়, সহজেই ছেড়ে কথা বলবে না তারা। তখনো সামনে দীর্ঘ পথ কিউইদের! ৪ ওভারে ৫ চার। সঙ্গে তিনটি ওয়াইড। ৫টি চারই আসে দুর্দান্ত টাইমিংয়ে। মুভমেন্ট পাচ্ছিলেন বুমরাহ-সিরাজরা, তবে বল ব্যাটে আসছিল ভালোভাবেই। দুটি চার মারেন ইনফর্ম ব্যাটার রাচিন রবীন্দ্র, কিন্তু ১৪টি ছিল ডটবল। শুরুর ৫ ওভারে নিউজিল্যান্ড তোলে ৩০ রান। ভারতের এ সময়ে ছিল ৪৭ রান। ষষ্ঠ ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমণে আসেন মোহাম্মদ শামি, উইকেট নেন প্রথম বলেই! ডেভন কনওয়ের পর নিজের দ্বিতীয় ওভারে শামি সাজঘরের পথ দেখান আরেক ওপেনার রাচিন রবীন্দ্রকে। দুজনই করেন সমান ১৩ রান। সেখান থেকে হাল ধরেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। দুই ওপেনারের দ্রুত বিদায়ের পর ড্যারিল মিচেলের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে তাদের জুটিতে পঞ্চাশ আসে ৪৮ বলে। এই জুটি ভাঙতে ফেরানো হয় শামিকে। কিন্তু পাল্টা আক্রমণে তার উপর চড়াও হন মিচেল। ছক্কার পর মারলেন চার। তার চারেই দলের রান স্পর্শ করে একশ। রবীন্দ্র জাদেজার বলে এক রান নিয়ে মিচেল ফিফটি স্পর্শ করেন ৪৯ বলে। এরপর কিউই অধিনায়কও ফিফটির দেখা পান। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ফিফটি পূর্ণ করেন ৫৮ বলে। জুটি ভাঙতে জাসপ্রিত বুমরাহকে আক্রমণে এনেছিলেন রোহিত। তার কৌশল কাজেও লেগে যাচ্ছিল। কিন্তু মিড অনে সহজ ক্যাচ ছেড়ে দিলেন মোহাম্মদ শামি। বল টেনে খেলার চেষ্টা করেন কেন উইলিয়ামসন তবে টাইমিং হয়নি। ক্যাচ যায় একদম শামি বরাবর। কিন্তু মুঠোয় রাখতে পারেননি তিনি। এই ক্যাচ ছাড়ার পর মনে হচ্ছিলো হয়তো ম্যাচটাই ছুটে যাবে ভারতের হাত থেকে। কারণ কেন আর মিচেল মিলে দলকে টেনে নিয়ে যান ২২০ রানে। এর মধ্যে মিচেল ছুঁয়ে ফেলেন তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৮৫ বলে ৬ষ্ঠ সেঞ্চুরি।