কথায় নয়, ক্রিকেটারদের মাঠের পারফরম্যান্স চান আকরাম

২৮শে নভেম্বর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ। স্বাগতিক বাংলাদেশসহ দুই দলই এখন অবস্থান করছে সিলেটে। ওয়ানডে বিশ্বকাপের লম্বা সফর আর রঙিন পোশাক ছেড়ে দুই দলই প্রস্তুতি নিচ্ছে সাদা পোশাকের লড়াইয়ের জন্য। কিন্তু টাইগারদের বিশ্বকাপ ব্যর্থতা যেন পিছু ছাড়ছে না। চলছে নানা পোস্টমর্টেম ও আলোচনা-সমালোচনা। ক্রিকেট বোদ্ধা থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালকরাও দলের পারফরম্যান্স নিয়ে ক্ষিপ্ত। কেউ চুপ করে বসে নেই। এমন ব্যর্থতার নানা কারণও তারা জানাচ্ছেন। এর মধ্যে অন্যতম ক্রিকেটারদের মাঠে পারফরম্যান্সের বাইরে অতীত কথন। এবারের ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে থেকে তামিম ইবকাল, সাকিব আল হাসান, লিটন দাস এর মতো শীর্ষ ক্রিকেটাররা মাঠের বাইরে যতটা সরব ছিলেন তা আগে কখনো দেখা যায়নি। এখনো যে তা বন্ধ হয়েছে পুরোপুরি এমন নয়। সুযোগ পেলেই ক্রিকেটাররা নানা মাধ্যমে কথা বলছেন একে অপরকে দোষারোপ করে। যা নিয়ে বিরক্ত জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবি পরিচালক আকরাম খান। তার মতে কথায় নয়, ক্রিকেটারদের মাঠের পারফরম্যান্সটাই এখন জরুরী। গতকাল মিরপুরে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কী অনেকে কথায় জিততে চায়। খেলোয়াড়দের উচিত মাঠে গিয়ে পারফর্ম করা। সে জিনিসটা আমরা করতে পারিনি। মাঠের বাইরে অনেক বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করেছি। এটা সবার বোঝা উচিত।’ ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটের মধ্যে বাংলাদেশ এখনো টেস্ট ক্রিকেটে পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পায়নি। এক যুগের বেশি সময় আগে টেস্ট মর্যাদা পাওয়া দলটি সাদা পোশাকে অর্জনের দিক থেকে খুব পিছিয়ে। ২০০০ থেকে ২০২৩- এ সময়ে ১৩৮ টেস্ট খেলে বাংলাদেশের জয় মাত্র ১৮ ম্যাচে, আর ড্র’ করেছে সমান সংখ্যক। হেরেছে ১০২ ম্যাচে। মানে টেস্ট ক্রিকেটে ইতিমধ্যেই পরাজয়ের সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছে টাইগাররা। এর মধ্যে কিউইদের বিপক্ষে টাইগারদের ১৭ টেস্টে প্রাপ্তি তাদেরই মাঠে ঐতিহাসিক একটি জয়। বাকি ১৩ টিতে হার আর ৩ ম্যাচে ড্র। হ্যাঁ, নিজেদের মাঠে ৬ ম্যাচ খেলে এসেছে ৩টি ড্র। বলার অপক্ষে রাখে না এই ফরম্যাটে কিইউদের চেয়ে কতটা পিছিয়ে বাংলাদেশ। শুধু কী তাই! সবশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যেখানে ৯ ম্যাচের ৭টিতে হেরেছে সেখানে নিউজিল্যান্ড খেলেছে সেমিফাইনাল পর্যন্ত। দুই দলের মাঠের পারফরম্যান্সের পার্থক্যও স্পষ্ট। বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিয়েই আকরাম খান হয়তো ক্রিকেটারদের মাঠের পারফরম্যান্সটাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে সাকিব ও তামিম প্রকাশ্যে যেভাবে কথার লড়াই করেছেন তার বড় প্রভাবই পড়ছে দলের ওপর। আকরাম খান তাদের নাম না নিলেও ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ‘মনে হয় না বাংলাদেশ এত বাজে খেলেছে এর আগে। ৯৯ তে ছয়টা ম্যাচের দুটিতে জিতেছি। প্রত্যাশা বেশি ছিল। আমরা পরিকল্পনাও করেছিলাম অনেক ভালোভাবে। চার বছর আগে থেকেই শুরু করেছিলাম যেহেতু ভারতে খেলা হবে। অ্যাটমসফেয়ার আমাদের মতো হবে। ওটা নিয়ে অনেক আশা ছিল আমাদের। একটা দেশে যদি খেলার আগে এত কথাবার্তা হয় অন্য বিষয় নিয়ে, তো ওই দল কোনোদিন ভালো করতে পারবে না। এটা আমি এশিয়া কাপেও বলেছিলাম, বিশ্বকাপের আগে এটা একটা ভালো টুর্নামেন্ট যারা অংশ নেবে তাদের জন্য। কিন্তু ওখানে আমরা এক্সপেরিমেন্ট করে পুরো দলকে দাঁড় করাতে পারিনি। শেষ পর্যন্ত একটা দলই আমরা দাঁড় করাতে পারিনি। এত এক্সপেরিমেন্ট করলে আমার মনে হয় না কোনো দেশ ভালো করবে।’অন্যদিকে দেশের ক্রিকেটের যে ব্যর্থতা আকরাম খান এই দায়টা শুধু ক্রিকেটারদের ওপরই চাপাতে চান না। তার মতে বিসিবি থেকে শুরু করে সকলকে এই ব্যর্থতার দায় নিতে হবে। কারণ দেশের বিষয়টা করো ব্যক্তিগত নয়। তিনি বলেন, ‘এই দেশ কারো ব্যক্তিগত না, সবার। যদি বাংলাদেশ ভালো করে, সবার ভালো লাগবে। কেউ যদি নিজেরা নিজেদের মতো করতে চায় তাহলে তো এটা হবে না। এটা হওয়া উচিতও না। সবসময় আমি দেখেছি যখন একটা মেজর টুর্নামেন্ট হয় তখন খেলা ছাড়া খেলার বাইরের জিনিসগুলো নিয়ে অনেক বেশি কথাবার্তা বলি। এজন্য সবাই চাপে পড়ে যায়। এই দায়টা আমি মনে করি সবারই। সবাইকে সম্মান করতে হবে। এবং যারা জড়িত আছে তাদের সম্মানটা দেওয়া উচিত। যারা অনেকদিন ধরে খেলছে, তাদের ওই সম্মানটা দেওয়া উচিত।’