মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীর বাড়ির মধ্য দিয়ে (মাঝামাঝি জায়গা) জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাধা দেওয়ায় প্রবাসীর বোনকে মারপিট করা হয়েছে। আইনি সহায়তা চেয়ে প্রবাসী মুহাম্মদ ফেরদৌস মিয়া মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে আবেদন করেছেন।
গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ও বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যেও সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী মুহাম্মদ ফেরদৌস মিয়া দুতাবাসের মাধ্যমে অভিযোগ করেন, তিনি দীর্ঘদিন থেকে প্রবাসে বসবাস করছেন। তার বাড়িতে স্ত্রী বোন ও অসুস্থ মাসহ কেবল মহিলারা বসবাস করেন। সেই সুযোগে তাদের গ্রামের পার্শ্ববর্তী বাড়ির মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে আমির উদ্দিন (৩৫) ও নিজাম উদ্দিন (৩৩), আলী মিয়ার ছেলে মালু মিয়া (৪০) ও সালেহ মিয়া (৩০), বলাই মিয়ার ছেলে মাখন মিয়া (৫৫) ও মাখন মিয়ার ছেলে গিয়াস উদ্দিন (৩৫) এবং তাদের কতেক সহযোগী মিলে তার বাড়ির মধ্য দিয়ে চলাচলের রাস্তা নির্মাণ করতে চান।
রাস্তা নির্মাণে প্রবাসী মুহাম্মদ ফেরদৌস মিয়ার বোন খাজুর বেগম বাধা প্রদান করলে তার উপর হামলা চালানো হয়। তিনি জুড়ী উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এ ঘটনায় গত ২৬ মে মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা (পিটিশন নং ১১৮/২০২২) দায়ের করেন। এর আগে ২০২১ সালে ২২ অক্টোবর একই ঘটনায় হামলা ও মারধরের অভিযোগে খাজুর বেগম জুড়ী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
খাজুর বেগমের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তদন্তক্রমে জুড়ী থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। আদালতের সেই নির্দেশ মোতাবেক জুড়ী থানার এএসআই জোসেফ আহমদ সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন। তিনি ঘটনার সত্যতা পান। গত ১৬ জুন আদালতের তদন্ত প্রতিবেদনে পুলিশ কর্মকর্তা অভিযুক্ত ব্যক্তিরা টিলা কেটে রাস্তা নির্মাণ করার চেষ্টা করে। বর্তমানে রাস্তা নির্মাণ বন্ধ আছে বলে উল্লেখ করেন।
এদিকে এ ঘটনায় স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আপস নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে রাস্তার জন্য এক শতক জমি খাজুরা বেগমকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু বৈঠকের সিদ্ধান্ত কোনো বাস্তবায়ন না করে গত ৩ সেপ্টেম্বর জোরপূর্বক টিলা কেটে রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করেন।
প্রবাসী মুহাম্মদ ফেরদৌস মিয়া প্রবাস থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, তার ক্রয়কৃত সম্পত্তি রক্ষা, জোরপূর্বক রাস্তা করতে হামলা করা হচ্ছে পরিবারের লোকজনের ওপর, রাতে ঘরে ঢিল নিক্ষেপ করায় বাড়ির লোকজন উদ্বেগ উৎকন্ঠায় রয়েছেন। এমনি পরিস্থিতিতে তিনি দূতাবাসের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেছেন।
দেখা যায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর রাস্তা নির্মাণের নামে টিলাকেটে গর্ত করা হয়েছে। ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বও টিলার মাটি কেটে পার্শ্ববর্তী একটি স্থানে ফেলা হয়। টিলা কেটে রাস্তা নির্মাণের কোনো সুযোগ না থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন জোরপূর্বক টিলা কেটে রাস্তা নির্মাণের ফের চেষ্টা চালায়।
স্থানীয় লোকজন জানান, প্রবাসীর বাড়ির পেছনের ৩-৪টি বাড়ির চলাচলের সুবিধার জন্য এবং ভোটের আশায় স্থানীয় প্রশাসন প্রবাসীর বাড়ির মধ্য দিয়ে রাস্তা জোরপূর্বক নির্মাণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
স্থানীয় মেম্বার নুর উদ্দিন জানান, চেয়ারম্যানসহ জুড়ী উপজেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সালিশ বৈঠকে বসে রাস্তা নির্মাণের ক্ষতি পুষাতে পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে এক শতক জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তারা মনছে না। এখান দিয়ে রাস্তা বানাতে হবে। টিলা কাটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাস্তা বানাতে টিলা কাটতে হবে। অন্তত ২০ ফুট টিলা কাটতে হবে।
গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম জানান, ব্রিটিশ আমল থেকে ১৫-২০টি পরিবার এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। বিষয়টি নিয়ে সেখানে দুটি পক্ষ তৈরি হয়েছে। ক্ষতিপূরণ দিয়েও নিষ্পত্তি করা চেষ্টা করা হলেও তারা মানছে না। টিলা কেটে পরিবেশের ক্ষতি করে রাস্তা নির্মাণের ব্যাপারে তিনি অবগত নন।
জুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, বিষয়টি আপস নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে। বিষয়টি নিয়ে কোনোভাবে কেউ বিশেষ ফায়দা নিতে পারবে না। আশা করি ন্যায়সঙ্গত সমাধান হবে।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাদেক কাওছার দস্তগীর জানান, প্রবাসীর বিষয়টা গুরুত্ব সহকারে দেখবেন।
মন্তব্য