শ্রীমঙ্গলে খেজুরীছড়া চা বাগানের র্যানার স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীকে ‘আই লাভ ইউ’ বলতে বলার অপরাধের প্রতিবাদের নামে বহিরগত কিছু লোক ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু ঘটনার একমাস পেরিয়ে গেলেও উপজেলা প্রশাসন, শিক্ষা অফিসারসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নীরব ভূমিকা পালন করছে।শ্রীমঙ্গল থানায় দেওয়া লিখিত অভিযোগে জানা যায়, শ্রীমঙ্গল খেজুরিছড়া চা বাগানের র্যানার স্কুল এন্ড কলেজের ৭ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ঐ স্কুলের এক খণ্ডকালীন শিক্ষক রুমে নিয়ে `আই লাভ ইউ' বলার জন্য পিড়াপিড়ি করেন। পরে ছাত্রীটি বিষয়টি তার ক্লাস ক্যাপ্টেন ও তার বান্ধবীকে জানায়। পরবর্তীতে ১ সেপ্টেম্বর ছাত্রী তার পরিবারকে বিষয়টি অবগত করলে তার পরিবার ও বহিরাগত কিছু লোক নিয়ে ৩ সেপ্টেম্বর স্কুলে প্রধান শিক্ষকের নিকট বিচার চান। পরে তারা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ৪ সেপ্টেম্বর স্কুলের প্রধান শিক্ষক জরুরি একটি মিটিংয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গেলে তার অনুপস্থিতিতে আন্দোলনের নামে শিক্ষকদেরে তাড়া করে নিয়ে একটি রুমে তালা বদ্ধ করে রাখে স্থানীয় কিছু যুবক। এ সময় ছাত্র ছাত্রীরা ক্লাস রুম থেকে বের হতে না চাইলে মারধর করে জোরপুর্বক টেনে বের করার চেষ্টা করে। এ সময় অনেক ছাত্রীদের হাত ধরে টানা হেঁচড়া করে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে বলে স্কুলের ছাত্রীরা জানিয়েছে।
খবর পেয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন এবং অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্র ছাত্রীরা জানান, প্রতিবাদের নামে ভিকটিমের পরিবার বহিরাগত বখাটে নিয়ে এসে তাণ্ডব চালায় স্কুলে। ছাত্র ছাত্রী ক্লাসের বাইরে যেতে না চাইলে মারধর করা হয়। এ সময় ছাত্রীদের গায়ে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করে। ছাত্রীরা বলেন একজন শিক্ষক আই লাভ ইউ বলার জন্য বললে শাস্তি হতে পারে, কিন্তু স্কুলে শিক্ষক লাঞ্চিত, মেয়েদের শ্লীলতাহানির কোন বিচার নেই।খেজুরীছড়া চা বাগানের র্যানার স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল হক বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে ২০১৭ সালে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে স্কুলে নিয়োগ দেওয়া হয়। গত ৩ সেপ্টেম্বর অভিযোগকারী স্কুলের ৭ম শ্রেণির ছাত্রীর পিতা অভিমান্য ব্যানার্জীসহ শতাধিক লোক ওই ছাত্রীকে স্কুলের খণ্ডকালীন শিক্ষক তাকে আই লাভ ইউ বলার জন্য বলেছেন বলে রাজঘাট ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের নিকট লিখিত আবেদনের অনুলিপি দেন। তিনি বিষয়টি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে সিন্ধান্ত নেবেন বলে তাদেরকে বললে আগত লোকেরা অভিযুক্ত শিক্ষককে জুতার মালা পরানোর দাবি করে। তিনি এই কাজটি করা যাবে না বলে জানান। তখন তাৎক্ষণিকভাবে তাদের চাপে সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রানতুষ সরকার, রাজঘাট ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সেলিম আহমদ, সাবেক ইউপি সদস্যর সুমন তাতী, গর্ভনিং বডির সদস্য আহসানুল হক দুলাল, খেজুরীছড়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য রষিষ্ট গোয়ালাসহ ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার হয়।পরদিন ম্যনেজিং কমিটির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান।পরদিন জরুরিভাবে জেলা প্রশাসকের অফিসে মিটিংয়ে চলে গেলে ছাত্রীটির পরিবারের লোকসহ কিছু লোক স্কুলের ভিতর প্রবেশ করে শিক্ষকদেরে রুমে তালা বদ্ধ করে উশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে বলে জানতে পারেন।রাজঘাট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বিজয় ব্যানার্জী বলেন, ৩ সেপ্টেম্বর আমাকে বিষয়টি অবগত করা হয়। ঐ দিন একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। পরদিন ম্যানেজিং কমিটিসহ বিষয়টি দেখা হবে বলে সিন্ধান্ত হয়। কিন্তু প্রধান শিক্ষক জরুরি মিটিংয়ে প্রধান শিক্ষক স্কুলে উপস্থিত থাকতে পারেননি। কিন্তু কিছু লোক স্কুলে গিয়ে শিক্ষকদেরে রুমে তালা বদ্ধ করে রাখে এবং ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে বাজে আচরণ করেছে শুনেছি। এমনকি আমাকেও গালি গালাজ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে আমি আর সেখানে যাইনি। অভিযুক্ত শিক্ষকের আচার আচরণ কখনো খারাপ পাইনি।শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিব মাহমুদ মিঠুন বলেন, র্যানার স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীকে প্রপোজ করার বিষয়টি জানার পর আমি আইনি ব্যবস্থা নিয়েছি।বখাটে কর্তৃক শিক্ষক হেনস্থা ও ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য