‘ছায়া হয়ে থাক সাকিব-মুশফিকরা’

২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসান কোন পজিশনে খেলবেন! অধিনায়ক থাকবেন নাকি দলের কোনও সাধারণ ক্রিকেটার! কিংবা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহীম তাদের দলে রাখা হবে কি হবে না এ নিয়ে চলবে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা? না, তাদের নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আর ভাবতে হবে না। নির্বাচকদেরও থাকবে না তাদের নিয়ে কোনো চাপ। কারণ যতটা জানা গেছে ভারতের ওয়ানডে বিশ্বকাপেই শেষ হয়ে গেল পঞ্চপাণ্ডব অধ্যায়। মাশরাফি বিন মুর্তজা, তামিম ইকবালের পর সাকিব, রিয়াদ, মুশফিককেও আর দেখা যাবে না ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসরে। তবে এখন প্রশ্ন তারা কতদিন খেলবেন বাংলাদেশের হয়ে! নাকি বিসিবি তাদের ভুলে নতুনদের নিয়ে মেতে উঠবে? হ্যাঁ, সামনের দিনগুলোতে সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে এই শঙ্কাটাই এখন সবার মনে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম আন্তর্জাতিক তারকা খ্যাতি পাওয়া মোহাম্মদ আশরাফুল চলতি বিশ্বকাপে ছিলেন সাংবাদিকের ভূমিকায়। গতকাল পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এই প্রসঙ্গ উঠতেই উদাস চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন মাঠের দিকে। এরপরই বললেন, ‘যতটা ধারণা করতে পারি মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর এটাই শেষ বিশ্বকাপ। তাই বলে যে তারা শেষ, এমন নয়। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে তারা যে পর্যায়ে নিয়ে গেছে এরপরও তাদবিসিবি’র উচিত দলের সঙ্গে তাদের ছায়ার মতো রাখা যত দিন তারা খেলতে চায়। কারণ ড্রেসিং রুমে তাদের অভিজ্ঞতা তরুণদের জন্য ভীষণ প্রয়োজন। সাকিবের জন্যও আমি একই কথা বলবো। তবে আমার মনে হয় তার ৬টি বিশ্বকাপ খেলার সামর্থ্য আছে। চাইলে খেলতে পারে ২০২৭ বিশ্বকাপেও। আর তা যদি না হয় সামনে যে তরুণদের নিয়ে ভাবা হচ্ছে তারা যেন তার ছায়া থেকে বঞ্চিত না হয়। ভয়টা এখানেই যে আমাদের দেশে বিদায়টা করোই ভালো হয় না।’কিন্তু সাকিব আল হাসান কি ২০২৭ পর্যন্ত খেলবেন? যতটা জানা গেছে তিনি নিজেই বলেছেন ২০২৫ এর চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত খেলতে চান। এরপর হয়তো ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেবেন। তার আগে সাকিবের হয়তো খেলা হতে পারে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বাংলাদেশ বলে কথা! এখানে কখন কোন নাটকীয়তা জমে ওঠে তা ধারণা করাও কঠিন। যেমনটা হয়েছে চলতি বিশ্বকাপের আগে তামিম ইকবালের সঙ্গে। ইনজুরি আর দলীয় রাজনীতির বলি হয়েছেন দেশের সবচেয়ে সফল ওয়ানডে ব্যাটসম্যান। আশরাফুল বলেন, ‘সাকিব কিন্তু বলে দেননি যে ২০২৫ এর চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে শেষ। তিনি বলেছেন এরপর ভাববেন। যদি সাকিবের মতো কাউকে সুযোগ না দিয়ে ছুড়ে ফেলা হয় তাহলে তো বলার কিছু নেই। তবে তিনি যে মানের ক্রিকেটার তিনি যতদিন দলের সঙ্গে থাকবেন ততোদিনই তার কাছ থেকে তরুণ বা যারা ভবিষ্যতের ক্রিকেটার তারা কিছু না কিছু অর্জন করবেন। একজন সাকিব ড্রেসিং রুমে থাকা মানে অনেক বড় পাওয়া। ৬টি বিশ্বকাপ খেলার সামর্থ্য কিন্তু সাকিবের আছে।’

আগামী বছরই যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে বসবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর। বলার অপেক্ষা রাখে না এখন থেকে তারুণ্য নির্ভর একটি দল নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে বিসিবি। সেখানে একমাত্র সাকিবেরই থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। তবে মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহীম কোন লক্ষ্য নিয়ে ক্রিকেট খেলে যাবেন? তারা কি জাতীয় দলে আর সুযোগ পাবেন? আশরাফুল মনে করেন এই দু’জনকে ছুড়ে ফেলাটা হবে ভুল। তিনি বলেন, ‘মুশফিক ওয়ানডে খেলে, মাহমুদউল্লাহ যে ফুরিয়ে যাননি তার প্রমাণ এই বিশ্বকাপ। এখানে একমাত্র সেঞ্চুরিটি তার হাত দিয়ে এসেছে। তার মানে বয়স যাই হোক অভিজ্ঞতা কী জিনিস তা কিন্তু তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাই সামানেও তাকে সুযোগ দেয়া উচিত। বিশেষ করে যেখানে ওয়ানডে ক্রিকেটই হুমকির মুখে সেখানে এমন অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা কিন্তু দলের তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণাই হবেন। আমার বিশ্বাস তারা ছায়া হয়ে থাকলে দলের মঙ্গলই হবে।’ 

দিল্লিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শেষ হয়েছে সাকিবের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। অন্যদিকে গতকাল পুনেতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক।